ডিএ নিয়ে নয়া আর্জি, পাল্টা অবমাননার চিঠি
নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) নিয়ে টানাপড়েন অব্যাহত। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া ছ’সপ্তাহের সময়সীমার শেষ দিন, শুক্রবার বকেয়া ডিএ-র ২৫% মেটানোর জন্য আরও ছ’মাস সময় চাইল রাজ্য সরকার। শীর্ষ আদালতে তাদের আরও আর্জি, ২৫% বকেয়া তারা আপাতত কর্মচারীদের না দিয়ে আদালতের কাছে জমা রাখতে চায়। এ দিনই বকেয়া মেটানোর সময়সীমা শেষ হওয়ায় রাজ্য সরকারকে আদালত অবমাননার নোটিস পাঠিয়েছে মামলাকারী কর্মী সংগঠনগুলি।
শীর্ষ আদালতে রাজ্যের আবেদন, ট্রাইবুনালের আদেশ মেনে রোপা, ২০০৯-এর আওতায় ডিএ দেওয়ার বিধিপদ্ধতি স্থির করা এবং বকেয়া ডিএ-র ২৫% আদালতের কাছে জমা দেওয়ার জন্য তাদের ছ’মাস সময় দেওয়া হোক। ডিএ দেওয়ার নীতিগত বিরোধিতা করে এই আবেদনেই বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি, কেন্দ্রের বঞ্চনা, কর্মচারীদের জন্য সরকারের খরচের বহরের প্রসঙ্গও তুলেছে রাজ্য। নবান্নের বক্তব্য, ডিএ দেওয়া সরকারের আর্থিক অবস্থা, মর্জির উপরে নির্ভরশীল। একটি সূত্রের মতে, গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে আদালত খুলবে ১৪ জুলাই। এখন চালু অবকাশকালীন বেঞ্চে এই শুনানি হবে না। ৪ অগস্ট, নির্ধারিত দিনেই শুনানি হতে পারে।
কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ়-এর সভাপতি শ্যামলকুমার মিত্র এবং সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “মনে হচ্ছে, বিচারপতি সঞ্জয় করোলের বেঞ্চকে এড়িয়ে যেতেই সময় নষ্ট করতে চাইছে নবান্ন।” তাঁদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের আগের নির্দেশ বহাল আছে। তাই বকেয়া না মেটানোয় আদালত অবমাননা হয়েছে। বেতন, ডিএ স্থায়ী খরচ। এখানে অর্থসঙ্কটের যুক্তি চলে না।’’ রাজ্য কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দেবাশিস শীলের প্রতিক্রিয়া, “আদালত অবমাননার নোটিস পাঠাচ্ছি।” সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আইনজীবী বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত বলছেন, “রাজ্য আদালত অবমাননা করেছে। এই আবেদন সময় নষ্টের চেষ্টা।” তৃণমূলের সরকারী কর্মচারী ফেডারেশন এর প্রতিষ্ঠাতা এবং পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর রাজ্য সভাপতি মনোজ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘সরকারের এই সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত।" অনেকেরই ধারণা, মামলা চলাকালীন বকেয়া ২৫% টাকা আদালতে জমা রাখতে চাইছে রাজ্য, যাতে মামলার রায় সরকারের পক্ষে এলে সেই টাকা ফেরত নেওয়া যায়।
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের দাবি, ডিএ বাধ্যতামূলক হতে পারে না। সর্বভারতীয় মূল্যসূচকের উপর ডিএ নির্ভর করতে পারে না। কেন্দ্রীয় হার অনুযায়ী ডিএ দিতেও বাধ্য নয় রাজ্য। নবান্নের যুক্তি, মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে ডিএ দেওয়া হয়।
কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির ১০০ শতাংশ প্রভাব এড়াতে গেলে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাই কেন্দ্র এবং রাজ্য পৃথক বেতন কাঠামো তৈরি করতেই পারে। রাজ্যের দাবি, তাদের আর্থিক পরিস্থিতি ভাল নয়। চলতি অর্থবর্ষে এমন কোনও খরচের জন্য বরাদ্দ ধরা নেই। তাই ধার করা ছাড়া উপায় থাকবে না। যা কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। তাই অন্তত
আরও ছ’মাস সময় দেওয়া হোক। বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রের বরাদ্দ আটকে রাখা বা কমিয়ে দেওয়ার হিসেব দিয়ে রাজ্যের দাবি, কেন্দ্রের কাছে তাদের প্রায় ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা পাওনা। নবান্নের দাবি, কর্মচারীদের স্বার্থে পেনশন এবং অবসরকালীন সুবিধা দিতে ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের প্রায় ১.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এলটিসি খাতে খরচ বেড়ে হয়েছে ৪১৩ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ সালে ৬৩৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শ্যামলের মন্তব্য, “অনুদান বাবদ কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খরচ, অথচ কর্মচারীদের প্রাপ্য দিতেই আর্থিক সঙ্কট হচ্ছে!”