জবাবে ফের ‘সিঁদুর’, চিনকে বার্তা রাজনাথের
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ২৭ জুন: এসসিও-র যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তানের আপত্তি থাকায় পহেলগাম সন্ত্রাসের উল্লেখ করতে পারেনি নয়াদিল্লি। চিনে এসসিও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ের সেই বৈঠকে ছিলেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। তাঁর সামনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপ্রাপ্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের জবাব দেওয়ার সুযোগও ভেস্তে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের পাশে দাঁড়িয়ে অস্বস্তি কমানোর চেষ্টা করলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর— কূটনৈতিক মহলে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আজ চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাডমিরাল দং জুনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে সীমান্ত শান্ত করা এবং পাক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও বার্তা দেন রাজনাথ সিংহ।
সূত্রের খবর, চিনের কাছে চারটি প্রস্তাব রেখেছেন রাজনাথ। প্রথমত, সেনা সরানোর পরিকল্পনা বহাল রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, সীমান্তের দুই প্রান্তে শান্তি বজায় রাখা যেন দুই দেশের ভৌগোলিক সীমারেখায় কোনও পরিবর্তন না হয়। এ ছাড়াও দুই দেশের মতবিরোধ মেটাতে সংশ্লিষ্ট বিশেষ প্রতিনিধিদের (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা স্তরের) দায়িত্ব দিতে হবে। চতুর্থত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ‘পাকবন্ধু’ চিনকে দিল্লির তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পাক মদতপুষ্ট সীমান্ত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নৈতিক অবস্থান। তিনি এ-ও জানান, সীমান্তপারের সন্ত্রাস মোকাবিলায় এ বার থেকে প্রয়োজন হলে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো পদক্ষেপ করবে ভারত। পাকিস্তানকে নিশানা করে গত কালই অবশ্য রাজনাথ বলেছিলেন, ‘‘কিছু দেশ সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জঙ্গিদের আশ্রয়ও দিচ্ছে। এই ধরনের ঘটনায় কোনও দেশের সমালোচনা করতে এসসিও-র দ্বিধা করা উচিত নয়। আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতি নিয়েছি।”
শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) যৌথ বিবৃতিতে সই না করার ব্যাখ্যা এ ভাবেই গত কাল দিয়েছিলেন রাজনাথ। আর আজ পাকিস্তানের নাম না করে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘একটি দেশ, অনুমান করতে পারেন কোন দেশের কথা বলছি, যারা বলছে…আমরা সেই (জঙ্গি হামলা) ঘটনার কোনও উল্লেখ চাই না।’’ জরুরি অবস্থার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘এসসিও-র উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা। সেখানে কাশ্মীরের পহেলগামের জঙ্গি হামলার ঘটনা কেন বিবৃতিতে দেওয়া হল না?”
চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন রাজনাথ। সেখানে তিনি জানান, ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। দু’পক্ষই সংঘাত এড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি চায়। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ছ’বছর পরে কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা শুরু হওয়ায় তিনি খুশি। বৈঠকে বিহারের মধুবনী চিত্রকলার একটি বাঁধানো ছবি চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হাতে তুলে দেন রাজনাথ। বৈঠকের নির্যাস জানিয়ে চিনের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত যে কোনও ধরনের সংঘাত এড়িয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।