আমেরিকায় শাটডাউন, দিন গুনছে বিশ্ব অর্থনীতি
নিজস্ব প্রতিবেদন
শুল্ক নীতি নিয়ে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নানা সিদ্ধান্তে ভুগছে ভারত থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে সেখানে সরকারি
সমস্ত কাজকর্ম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া (শাটডাউন)। যা দীর্ঘ দিন ধরে চললে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির হাল খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পের দেশে আর্থিক বৃদ্ধির গতি ধাক্কা খাওয়ার প্রভাব পড়বে অন্যান্য দেশের উপরে। পাল্লা দিয়ে বিশ্ব বাজারে আরও বাড়তে পারে সোনার দাম। উপরন্তু আমেরিকায় এইঢ-১বি ভিসা ফি বৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে সেখানে সরকারি কাজ বন্ধ থাকলে সমস্যায় পড়তে পারেন সে দেশে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিরাও। উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য বিমায় ভর্তুকি নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় আমেরিকায় ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অর্থবর্ষের বাজেট পাশ হয়নি। যা সরকারি কাজ বন্ধের কারণ। শেষ বার ট্রাম্পের প্রথম দফাতেই ২০১৮-১৯ সালে রেকর্ড ৩৫ দিন চলেছিল শাটডাউন।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় নির্বিচারে প্রায় সব দেশের পণ্যে শুল্ক বসানো, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধের মতো নানা কারণে অস্থির রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।
এই পরিস্থিতিতে অল্প দিনের শাটডাউনে হয়তো তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু তা দীর্ঘ দিন চললে আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধি, বাজারে চাহিদা, বেকারত্বের হার, কাজে যোগদানের মতো আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য মিলবে না। সে ক্ষেত্রে ২৮-২৯ অক্টোবরের বৈঠকের আগে পরিসংখ্যান না পেলে সুদের হার স্থির করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ। ফলে অস্থির হবে বিশ্বের শেয়ার তথা আর্থিক বাজার। আবার শেয়ারে অস্থিরতা তৈরি হলে সুরক্ষিত লগ্নি হিসেবে সোনার চাহিদা আরও বাড়বে, যা বিশ্ব বাজারে তার রেকর্ড দরকে আরও ঠেলে তুলবে। ইতিমধ্যেই বুধবার যা পৌঁছেছে আউন্সে ৩৮৯৫.০৯ ডলারে।
বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলছেন, ‘‘শাটডাউনে প্রতিদিন ৪০ কোটি ডলার লোকসান হচ্ছে আমেরিকার। যা চললে সেখানকার জিডিপি ধাক্কা খাবে। এর প্রভাব পড়বে বিশ্বের অর্থনীতিতে।’’
তাঁর আরও বক্তব্য, অনিশ্চয়তা তৈরি হলে সব সময়েই সোনার দাম বাড়ে। এমনিতেই ভারতে এখন তা রেকর্ড দরের (কলকাতায় ২৪ ক্যারাট ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনা কর বাদে প্রায় ১.১৫ লক্ষ টাকা) কাছাকাছি রয়েছে। ফলে বিশ্ব বাজারে সোনা আরও চড়লে প্রভাব এড়াতে পারবে না দেশও।
তবে শেয়ার বাজার এখনই পড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি। বিশেষত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার বৃহস্পতিবার উঠেছে (ভারতে মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর জন্মদিন ও দশেরা উপলক্ষে বাজার বন্ধ ছিল)। যদিও ভিসা সমস্যা না মেটা পর্যন্ত দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প উদ্বেগের মধ্যে থাকবে। এ বার আমেরিকায় সরকারি অফিস বন্ধ থাকলে ভিসা সংক্রান্ত কাজ হবে না। যার প্রভাব ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমেরিকায় ঘুরতে বা কাজে যেতে আগ্রহীদের উপরে পড়বে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। ফলে সব মিলিয়ে আমেরিকায় শাটডাউনে ভারত-সহ সারা বিশ্বের কড়া নজর থাকবে বলেই মনে করছে তারা।