চোরাচালান রুখতে বেড়ায় জোর
গণপিটুনিতে তিন মৃত্যু ঘিরে দিল্লি ঢাকা চাপানউতোর
নিজস্ব সংবাদদাতা
আগরতলা, ১৭ অক্টোবর: ত্রিপুরায় গণপিটুনিতে গত বুধবার তিন জন বাংলাদেশি গরু পাচারকারীর মৃত্যুর জেরে দুই দেশের মধ্যে নতুন চাপানউতোর বাধল। এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না বলে বিবৃতি দিয়ে তদন্ত দাবি করেছে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। তার জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ওই তিন জনকে গরুচোর বলেই উল্লেখ করে বাংলাদেশকে সীমান্তে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ বন্ধে পদক্ষেপ করতে বলেছে। ওই গরুচোরদের আক্রমণে আহত ত্রিপুরার দুই শ্রমিকের মধ্যে এক জন মারা যান।
ত্রিপুরার বাংলাদেশ সীমান্ত-ঘেঁষা খোয়াই জেলায় ঘটনাটি ঘটে। এসপি রাণাদিত্য দাস বলেন, চাম্পাহাওর থানার অন্তর্গত বিদ্যাবিল গ্রামের দুই বাসিন্দা বুধবার সকালে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রাবার বাগানে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে গরু নিয়ে তিন জনকে বাংলাদেশের দিকে যেতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। ধীরেন্দ্র তেলেঙ্গা ও মিঠুন তেলেঙ্গা নামের দুই শ্রমিক ওই তিন জনকে আটকানোর চেষ্টা করলে তারা ধীরেন্দ্র ও মিঠুনকে দা দিয়ে কোপ মারে।
এই ঘটনা জানাজানি হতেই
গ্রামবাসীরা তিন অভিযুক্তকে
ধরে ফেলে বেধড়ক মারধর করে।
তিন জনই মারা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি বাংলাদেশি সিম-সহ মোবাইল উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের পরে বৃহস্পতিবার দেহগুলি বিএসএফ-বিজিবির উপস্থিতিতে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আহত ধীরেন্দ্র ও মিঠুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁদের আগরতলায় জিবি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই মিঠুন
মারা যান।
আজ বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে ওই তিন জনের মৃত্যুর তীব্র নিন্দা করেছে। ঘটনাটিকে ‘মানবাধিকার ও আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে উল্লেখ করে ভারত সরকারের কাছে অবিলম্বে নিরপেক্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে তারা। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে পদক্ষেপের দাবি জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার বলেছে, ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের
বক্তব্য, ‘নাগরিকত্ব নির্বিশেষে প্রত্যেকে তাঁর মানবাধিকার রক্ষার
পূর্ণ নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার রাখেন, সে তিনি অনিচ্ছাকৃত ভাবে সীমান্তের যে প্রান্তেই অবস্থান করুন না কেন।’
এমন বিবৃতিতেই ইঙ্গিত, ওই তিন জন ইচ্ছাকৃত ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে এসেছিল বলে মনে করছে না ঢাকা। বাংলাদেশিদের আক্রমণে দুই ভারতীয়ের আহত হওয়া বা এক জনের মৃত্যু নিয়েও তারা নীরব। উল্টে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘ত্রিপুরায় চরমপন্থীদের হামলায় তিন জন নিরপরাধ বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। ভারত
সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে
কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা স্পষ্ট
জানতে চাক বাংলাদেশ সরকার।’ যদিও ঘটনার দিনেই খোয়াইয়ের এসপি দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশি তিন জনের কাছে কাছে দা ও বল্লম ছিল। সেগুলি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
ঢাকার বিবৃতির পাল্টা ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র
রণধীর জায়সওয়াল বলেছেন, ‘‘বুধবার ত্রিপুরায় ভারতীয়
ভূখণ্ডের প্রায় তিন কিলোমিটার ভিতরে একটি ঘটনায় তিন জন বাংলাদেশি চোরাচালানকারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই দলটি সীমান্ত পেরিয়ে এসে বিদ্যাবিল গ্রাম থেকে গরু চুরির চেষ্টা করে। তারা ছুরি এবং দা নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের আক্রমণ করে। অন্য গ্রামবাসীরা এসে প্রতিরোধ করেন। প্রশাসনিক প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গেলে দুই চোরাচালানকারীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তৃতীয় জন পরের দিন হাসপাতালে মারা যায়।’’
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের মতে, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখতে বাংলাদেশের পদক্ষেপ করা যে প্রয়োজন, এই ঘটনা তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে অপরাধ ও চোরাচালান রুখতে প্রয়োজনীয় স্থানে বেড়া নির্মাণে সায় দিক বাংলাদেশ।