প্রথম মেয়র বিতর্কে মামদানির সঙ্গে টক্কর কুয়োমো-স্লিওয়ার
অভীক সানোয়ার রহমান l নিউ ইয়র্ক
১৭ অক্টোবর: নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মেয়র প্রার্থী বিতর্কে বৃহস্পতিবার রাতে তিন প্রধান প্রার্থী— ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী জ়োহরান মামদানি, রিপাবলিকান নেতা কার্টিস স্লিওয়া এবং নিউ ইয়র্ক প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর তথা এ বারের নির্বাচনে
নির্দল প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমো এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নিলেন। জুন মাসে প্রাইমারি নির্বাচনে কুয়োমোকে বিপুল ভোটে হারিয়ে হঠাৎই সংবাদের শিরোনামে চলে আসেন ভারতীয় পরিচালক মীরা নায়ারের ছেলে, ৩৪ বছর বয়সি মামদানি। চূড়ান্ত ভোট ৪ নভেম্বর। তাই তার আগে দু’টি বিতর্কে সকলেরই চোখ রয়েছে মামদানির দিকে। প্রধান যে বিষয়গুলি নিয়ে এ দিন বিতর্কের মঞ্চ সরগরম হয়, তা হল—
অভিজ্ঞতা বনাম নয়া দৃষ্টিভঙ্গি
বিতর্কের শুরু থেকেই কুয়োমো মামদানির প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “শহরের নেতৃত্বের জন্য অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই।” এর জবাবে মামদানি কুয়োমোর অতীতে প্রশাসনিক বিতর্ক, বিশেষত কোভিড-১৯ অতিমারি ও যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। মামদানির কথায়, “অভিজ্ঞতা মানেই সততা নয়। নিউ ইয়র্কবাসীর এখন প্রয়োজন নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির।”
বাসস্থান ও ভাড়ার সঙ্কট
মামদানি ঘোষণা করেন, নির্বাচিত হলে তিনি নিয়ন্ত্রিত ভাড়ার অ্যাপার্টমেন্টগুলির ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত করবেন এবং আগামী দশ বছরে দু’লক্ষ ‘সাশ্রয়ী’ বাসস্থান নির্মাণ করবেন। কুয়োমো পাল্টা যুক্তি দেন যে, শুধু ভাড়াবৃদ্ধি স্থগিত রাখলে চাপ কমবে না; বরং আবাসনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়ার দাবি, “এঁদের দু’জনের পরিকল্পনাই শহরের বিপুল জনসংখ্যা ও উন্নয়নের বাস্তব চাহিদা বোঝে না।”
নিরাপত্তা ও পুলিশি ব্যবস্থা
পুলিশি ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রসঙ্গে তিন প্রার্থীর অবস্থান ভিন্ন ছিল। কুয়োমো ও স্লিওয়া অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ ও কঠোর আইন প্রয়োগের পক্ষে কথা বলেন। অন্য দিকে, মামদানি ‘ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিটি সেফটি’ নামে একটি নতুন কাঠামোর প্রস্তাব দেন, যা সমাজভিত্তিক নিরাপত্তা জোরদার করবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ
জাতীয় রাজনীতি ও পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বিতর্কে উত্তাপ ছড়ায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব প্রসঙ্গে তিন প্রার্থীই সতর্ক অবস্থান নিয়েছিলেন। ইজ়রায়েল-গাজ়া সংঘাত প্রসঙ্গ উঠলে মামদানি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তখন কুয়োমো মামদানির কাছে জানতে চান, তাঁর অবস্থান কি স্পষ্ট হামাস-বিরোধী? মামদানি জানান, তিনি কখনওই ‘সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী’ হামাসের পক্ষ নিয়ে কথা বলেননি। কিন্তু একই সঙ্গে মামদানি এ কথাও বলেন যে, যে ভাবে ইজ়রায়েল প্যালেস্টাইনে গণহত্যা
চালাচ্ছে তিনি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়েই যাবেন। প্রসঙ্গত, নিউ ইয়র্ক শহরে প্রচুর ইহুদি বসবাস করেন। ফলে ইজ়রায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব এই বিতর্কের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
কে এগিয়ে?
বিতর্ক শেষে ‘জয়ী’ কে— তা নিয়ে স্পষ্ট ঐকমত্য নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মামদানি শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, যা তরুণ ভোটারদের কাছে সাড়া ফেলেছে। অন্য দিকে, কুয়োমোকে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে কিছু প্রশ্নের উত্তরে অনেক বেশি পাকাপোক্ত মনে হয়েছেন। স্লিওয়া উভয় পক্ষের উপরেই আক্রমণ চালিয়ে রিপাবলিকান ঘরানার ধারা বজায় রাখেন।
দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থী বিতর্ক হবে ২২ অক্টোবর। সেই বিতর্কেই নিউ ইয়র্ক সিটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের দিক নির্ধারিত হতে পারে বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের।