রাজস্থানে খুন করে আশ্রয়ের খোঁজে ফের লক্ষ্য শহর, ধৃত তিন
নিজস্ব সংবাদদাতা
রাজস্থানে এক ব্যবসায়ীকে খুন করে এ শহরে আশ্রয় নিতে আসা তিন দুষ্কৃতীকে আটক করল কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে সল্টলেকে এই ধরপাকড় ঘিরে তৈরি হল টানটান উত্তেজনা। দুষ্কৃতীদের ধরা পড়ার খবর পেয়ে শুক্রবার সকালেই ফুলবাগান থানায় চলে আসে রাজস্থান পুলিশের একটি দল। তারাই গ্রেফতার করে তিন জনকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হল ধর্মেন্দ্র গুর্জর, মহেশ গুর্জর এবং গণপত গুর্জর। শুক্রবার ধৃতদের শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে ট্রানজ়িট রিমান্ডে রাজস্থান নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
সূত্রের খবর, অভিযুক্তদের অবস্থান কলকাতার কাদাপাড়ায় জানতে পেরে কলকাতা পুলিশকে তা জানায় রাজস্থান পুলিশ। সেই তথ্য পেয়ে ফুলবাগান থানার পুলিশ তাদের খুঁজে আটক করে। কলকাতা পুলিশের দাবি, সন্ধ্যায় তিন সন্দেহভাজনের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে তারা সল্টলেকের দিকে পালায়। প্রথমে দু’জন ধরা পড়ে। পরে আরও এক জনকে পাকড়াও করা হয়। তাকে ধরতেই মূলত বেগ পেতে হয় পুলিশকে।
ই এম বাইপাসের কাদাপাড়া মোড়ের কাছে সল্টলেকের পূর্বাচল আবাসনের একটি ফ্ল্যাটের বারান্দার দিকের দরজায় শব্দ পেয়ে গৃহকর্তা সেটি খুলতেই ঢুকে পড়ে এক অচেনা ব্যক্তি। টি-শার্ট, প্যান্ট, স্নিকার্স পরা, চুল ছাঁটা লোকটি বলে, ‘‘চোর আয়া হ্যায়।’’ এমন শুনে হতচকিত হলেও সিঁড়ির দরজা খুলে সেই ব্যক্তিকে বেরিয়ে যেতে বলেন গৃহকর্তা। পরে স্থানীয়দের চিৎকারে বুঝতে পারেন, ‘আগন্তুক’ পুলিশ নয়।
তত ক্ষণে ওই ব্যক্তি সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে যায়। নজর এড়াতে কার্নিশে শুয়ে পড়ে সে। নীচ থেকে বাসিন্দারা তাকে নেমে আসতে বলেন। কিছু পরে ওই ব্যক্তি ছাদে উঠে যায়। সেখান থেকে বাড়ির জোড়া ছাদ ধরে অন্য প্রান্তে পাইপ বেয়ে নীচে নেমে পালায়। ওই দুষ্কৃতী তখন পুলিশের হাত থেকে পালাচ্ছিল। পুলিশ জানায়, ওই আবাসনের পাশের আবাসন দিয়ে পালাতে যায় সে। সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীরা তাড়া করেন তাকে। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কাছ থেকে সেই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে পুলিশ।
গত ৭ অক্টোবর রাজস্থানের দিদওয়ানা জেলার কুচামান থানা এলাকায় তোলার টাকা না পেয়ে জিমের মধ্যেই ব্যবসায়ী রমেশ রুলানিয়াকে গুলি করে খুন করা হয়। গ্যাংস্টার রোহিত গোদরার দলের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় জড়িত তিন দুষ্কৃতীকে ধরতে রাজস্থান পুলিশ মাথা-পিছু এক লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
লালবাজার জানিয়েছে, রাজস্থানের ব্যবসায়ীকে খুনের পরে অভিযুক্তেরা দক্ষিণ ভারতের তিরুপতি মন্দির দর্শনে যায়। এ ছাড়া, পুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং দেওঘরের মন্দির দর্শনেও গিয়েছিল তারা। কলকাতায় কালীঘাটেও যাওয়ার কথা ছিল বলে জেরায় দাবি করেছে অভিযুক্তেরা। পুলিশের নজর এড়াতে তিরুপতিতে নেড়াও হয় তারা। ট্রেনে চেপে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাওড়া স্টেশনে আসে। সেখান থেকে ওই দিন বিকেলে যায় শিয়ালদহে। সেখানকার একটি দোকান থেকে পোশাক কিনে সল্টলেক সংলগ্ন এলাকায় লুকিয়ে থাকতেই ফুলবাগান-কাদাপাড়া অঞ্চলে গিয়েছিল তারা।
ধৃতেরা কেন এই শহরকেই বেছে নিল, সে বিষয়ে জানতে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা তাদের জেরা করেছেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ধৃতেরা এই শহরে আশ্রয় খুঁজছিল। কিন্তু টাকা তারা সঙ্গে বহন করেনি। যেখানে তারা যাচ্ছিল, সেখানে তাদের পরিচিত ভিন্ রাজ্যের এক ব্যক্তি অনলাইনে পেমেন্ট করছিল। অভিযুক্তদের থেকে দু’টি ব্যাগ ও একটি ফোন উদ্ধার হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাসকয়েক আগে পটনার একটি হাসপাতালে ভর্তি এক দুষ্কৃতীকে খুন করে সেখানকার গ্যাংস্টারেরাও পালিয়ে কলকাতার আনন্দপুর এলাকার অতিথিশালায় আশ্রয় নিয়েছিল। রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের এসটিএফ চার জনকে গ্রেফতার করে। এর আগে ২০২১ সালে নিউ টাউনে সাপুরজি আবাসনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সেখানে লুকিয়ে থাকা পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারের মৃত্যু হয়।