আসন ভাগাভাগি অধরাই বিরোধীদের
প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর: রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব একসঙ্গে ১৬ দিন ধরে সাসারাম থেকে পটনা পর্যন্ত ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করেছিলেন। শুধু বিহার নয়, জাতীয় স্তরেও বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক নেতারা তাতে যোগ দিয়েছিলেন। ‘ভোট চোর, গদ্দি ছোড়’ স্লোগানের সঙ্গে বিহারের অন্যান্য সমস্যাও তাতে উঠে এসেছিল। গত ১ সেপ্টেম্বর ভোটার অধিকার যাত্রার শেষে আরজেডি, কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছিলেন, বিহারে বিরোধীদের ‘মহাগঠবন্ধনে’র পক্ষে হাওয়া উঠেছে।
এখন সেই কংগ্রেস, আরজেডি নেতারাই ঘরোয়া স্তরে মানছেন, রাহুল-তেজস্বীর যাত্রায় তৈরি হাওয়া আবার স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। কারণ, গত দু’সপ্তাহ ধরে ‘মহাগঠবন্ধন’ জেডিইউ-বিজেপির এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণানোর বদলে নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে চুলোচুলিতে ব্যস্ত থেকেছে। তবু আসন রফা বা প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে উঠতে পারেনি। অথচ বিজেপি, জেডিইউ দুই দলই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে।
বিহারে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট ৬ নভেম্বর। তার মনোনয়নের সময় শুক্রবার শেষ হয়েছে। ‘মহাগঠবন্ধনে’র মধ্যে কে কতগুলি আসনে লড়বে, তা কিন্তু নেতারা ঘোষণা করে উঠতে পারেননি। ফলে অন্তত আটটি আসনে জোটের বিভিন্ন শরিক প্রার্থী দিয়েছে। একটি আসনে আবার কংগ্রেসের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই এড়াতে সিপিএম প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রথম দফার ভোটগ্রহণের ১২১টি আসনের মধ্যে কে কতগুলি আসনে লড়ছে, তা-ও স্পষ্ট নয়। বিরোধী জোটের দাবি, শনিবার এ বিষয়ে ঘোষণা হতে পারে। প্রথম দফার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন, ২০ অক্টোবরের আগে অন্তত ছবিটি স্পষ্ট হলে জোট শরিকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই এড়ানোর রাস্তা খোলা থাকছে। ২০ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন জমারও শেষ দিন। ‘মহাগঠবন্ধনে’ কোনও সমস্যা নেই বোঝাতে বিহার কংগ্রেসের নেতা অখিলেশ প্রসাদ সিংহ আজ বলেছেন, বিরোধী জোট সরকারে এলে তেজস্বী যাদবই মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কংগ্রেস অবশ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা করেনি।
বিরোধী জোট সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে সিপিআই-এমএল লিবারেশন বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে ২০টি আসনে লড়বে। মুকেশ সাহনির বিকাশশীল ইনসান পার্টি লড়বে ১৫টি আসনে। সাহনি আজ জানান, তিনি নিজে ভোটে লড়বেন না। তবে ‘মহাগঠবন্ধন’ ক্ষমতায় এলে উপমুখ্যমন্ত্রী হবেন। কংগ্রেস ৬০টি, আরজেডি ১৩০-১৩৫টি আসনে লড়তে পারে। আপাতত বৈশালী, লালগঞ্জের মতো আসনে কংগ্রেস, আরজেডি দুই দলই প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস একতরফা ৪৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার পরে আরও পাঁচটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধীর নির্দেশ মেনে বিহারের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৃষ্ণ অল্লাভুরু ৬০টি আসন এবং অন্তত ৩০টি জেতার মতো আসনের জন্য দর কষাকষি চালিয়ে যাচ্ছেন।
কংগ্রেসের প্রার্থী পদ নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস প্রথমে জালে আসনে মহম্মদ নৌশাদকে প্রার্থী করেছিল। ভোটার অধিকার যাত্রার সময় নৌশাদের আয়োজিত জনসভা থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মাকে গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছিল। সেই নৌশাদ প্রার্থী হওয়ায় বিজেপি নতুন করে মাঠে নামছে দেখে আরজেডি-র চাপে কংগ্রেস আরজেডি-রই সদস্য ঋষি মিশ্রকে প্রার্থী করেছে। কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রবীণ নেতা তারিক আনোয়ার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।