নীতীশ-সাক্ষাতেও মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে ধোঁয়াশা শাহের
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর: ভোট প্রচারে পটনা গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নে জেডিইউয়ের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিলেন অমিত শাহ। গত কাল একটি সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জোটের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসাবে নীতীশ কুমারকে সরাসরি তুলে ধরার পরিবর্তে অমিত শাহ জানান, জেতার পরে বৈঠক করে এনডিএ-র শরিক দলগুলি নিজেদের মধ্যে থেকে এক জন নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে
বেছে নেবেন।
আসন নিয়ে জটিলতার পাশাপাশি এনডিএ জোটের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা না করায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ নীতীশ কুমার। সেই বার্তা পাঠানো হয়েছে বিজেপিকেও। তার পরেও গত কাল নিজের বক্তব্যে যে ভাবে নীতীশ কুমারকে ফের মুখ্যমন্ত্রী করার প্রশ্নটি অমিত শাহ এড়িয়ে গিয়েছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এনডিএ জিতলে নীতীশই ফের মুখ্যমন্ত্রী হবেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে গত কাল শাহ বলেন, ‘‘আমি কে মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার! আমরা বিহারে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে নির্বাচন লড়ছি। নীতীশ কুমারের উপরে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। এনডিএ-তে একাধিক দল রয়েছে। জয়ী বিধায়কেরা আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেবেন।’’
প্রথাগত ভাবে শাহ কিছুই ভুল বলেননি। সাধারণত এ ভাবেই জয়ী জোটের দলগুলি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কোনও একটি দলের নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু যে হেতু রাজ্যটি বিহার এবং অতীতে একাধিক বার নীতীশ মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখতে নিজের সুবিধা মতো শরিক পরিবর্তন করেছেন, ফলে শাহের ওই বক্তব্য নিয়ে প্রবল জল্পনা ছড়িয়েছে মগধ-ভূমিতে। বিজেপি-জেডিইউ একে রুটিন বক্তব্য বলে এড়িয়ে যেতে চাইলেও এনডিএ-র শরিক হাম দলের নেতা জিতনরাম মাঝির কথায়, ‘‘কথাটা অমিত শাহ ঠিকই বলেছেন। কিন্তু ভোটে কাউকে একজন মুখ্যমন্ত্রী মুখ করে যাওয়া উচিত। এতে ভোটারদের মনে সংশয় থাকে না।’’ অন্য দিকে কংগ্রেসের বক্তব্য, নিজের সুবিধা মতো দল বদল করার প্রশ্নে নীতীশ অতি দক্ষ। বিজেপিও তা ভাল করেই জানে। বিজেপিও এও জানে, এ বারেও ভোটের ফল আশানরূপ না হলে ফের ডিগবাজি খেয়ে বিরোধীদের হাত ধরতে পারেন নীতীশ। তাই সম্ভবত নীতীশকে চাপে রাখতেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নে ধোঁয়াশা রেখে দিলেন অমিত শাহ। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি নেতা মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারির চাঁছাছোলা বক্তব্য, ‘‘বিজেপির বারংবার বুঝিয়ে দিচ্ছে, নীতীশের রাজনৈতিক মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে! অমিত শাহের কথাতেই স্পষ্ট, ওঁরা জিতলে বিজেপি ও তাঁর শরিক দলেরা একজোট হয়ে নীতীশকে প্রস্থানের দরজা দেখিয়ে দেবেন।’’
তাঁর মন্তব্য ঘিরে গত কাল রাত থেকে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় আজ সকালে নীতীশের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন অমিত শাহ। দু’দলের নেতাদের উপস্থিতিতে দুই নেতার মধ্যে প্রায় কুড়ি মিনিট আলোচনা হয়। বৈঠকের পরে নীতীশ-ঘনিষ্ঠ জেডিইউ সাংসদ রাজীব রঞ্জন সিংহ বলেন, ‘‘অমিত শাহের কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। যে কোনও জোটে এ ভাবেই কোনও নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়।’’
আজ নীতীশের সঙ্গে বৈঠকের পরে সারণ কেন্দ্রে এনডিএ-র হয়ে প্রচারে যান অমিত শাহ। সেখানে বিহারের প্রাক্তন ডন শাহবুদ্দিনের ছেলে ওসামা সাহাব-কে আরজেডি টিকিট দেওয়ায় শাহ বলেন, ‘‘আরজেডির তালিকায় দেখলাম মৃত শাহবুদ্দিনের ছেলের নাম রয়েছে। শাহবুদ্দিনের ছেলে যদি টিকিট পান, তা হলে বিহার কি আদৌ সুরক্ষিত থাকবে?’’ রাজনীতিকদের মতে, আজ শাহবুদ্দিনের ছেলের প্রসঙ্গ তুলে লালুপ্রসাদের শাসনে শাহবুদ্দিন কী ভাবে নিজের এলাকায়
শাসন চালাত, সেই স্মৃতি উস্কে দেওয়ার পাশাপাশি হিন্দু
ভোটব্যাঙ্ককে এক জোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন শাহ। পরে সন্ধ্যায় পটনায় বিশিষ্টজনদের সঙ্গে একটি বৈঠকে ক্ষমতায় এলে বিহারে শিল্পায়নের
বার্তা দেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, ‘‘মেধার প্রশ্নে বিহারী যুবকেরা অন্যদের থেকে এগিয়ে। তাই তাঁদের কথা ভেবে রাজ্যে আগামী দিনে শিল্পায়নে মন দেবে সরকার।’’ শিল্পায়ন নিয়ে শাহের প্রতিশ্রুতিকে নির্বাচনী ভাঁওতা বলে আক্রমণ করে বিরোধী আরজেডি নেতৃত্বের বক্তব্য, গত দু’দশক ধরে বিহারে ক্ষমতায় রয়েছে এনডিএ। এই দু’দশকে বিহারে কেন শিল্পায়ন করেনি বিজেপি
জোটের সরকার?