নিহত হরিওমের পরিবারের কাছে গেলেন রাহুল
লখনউ, ১৭ অক্টোবর: কথা রাখলেন রাহুল গান্ধী। রায়বরেলীতে গণপিটুনিতে খুন হওয়া হরিওম বাল্মীকির বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আজ দেখা করলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ। চলতি মাসের গোড়ায় রায়বরেলীতে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছিল দলিত সম্প্রদায়ের হরিওমকে। সেই ঘটনার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের প্রশাসনকে বিঁধতে শুরু করেছিল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিরোধী দলগুলি। রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে অখিলেশ যাদবেরা অভিযোগ করেছেন, দলিত এবং অনগ্রসরদের নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ যোগী প্রশাসন। কিছু দিন আগেই রাহুল ঘোষণা করেছিলেন, ফতেপুরে নিহত হরিওমের বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
গত ২ অক্টোবর রাতে রায়বরেলীতে চোর সন্দেহে পিটিয়ে খুন করা হয় বছর চল্লিশের হরিওমকে। সেই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মূল অভিযুক্তকে ধরা হয় এনকাউন্টারের পরে। ঘটনাটি নিয়ে দেশ জুড়ে শোরগোল শুরু হওয়ায় হরিওমের এক বোনকে সরকারি তরফে চুক্তি ভিত্তিক চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। ফতেপুরের সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরির নিয়োগপত্র ইতিমধ্যেই তুলে দেওয়া হয়েছে হরিওমের বোন কুসুমের হাতে। আজ সকালে প্রথমে চাকেরি বিমানবন্দরে নামেন রাহুল। সেখান থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক পথে সফর করে হরিওমের বাড়ি পৌঁছন তিনি। নিহত যুবকের কাকা চৌধরি ভক্তদাসের সঙ্গে কথা
বলেন তিনি।
এ দিকে, আজ সকালের দিকে অনলাইনে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যেখানে হরিওমের এক ভাই জানান, তাঁরা রাহুলের সঙ্গে দেখা করতে রাজি নন। ওই ব্যক্তি জানিয়েছিলেন, সরকারি তরফে তাঁদের যে সাহায্য করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট। যোগী আদিত্যনাথের মন্ত্রিসভার সদস্য এসে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। তবে রাহুল আজ অভিযোগ করেছেন, হরিওমের পরিবারকে ভয় দেখাচ্ছে যোগী প্রশাসন। তাঁদের হুমকি দিয়ে বলা হয় যে, কোনও মতেই যেন রাহুলের সঙ্গে তাঁরা দেখা করতে রাজি না হন। রাহুল আজ বলেছেন, ‘‘এই পরিবার তো কোনও অপরাধ করেনি। এদের সঙ্গে অপরাধ হয়েছে। কিন্তু দেখানো হচ্ছে, এঁরাই যেন অপরাধী। এঁদের বাড়ি থেকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না, ভয় দেখানো হচ্ছে।’’ প্রায় একই ধরনের অভিযোগ জানিয়ে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন রাহুলের বোন তথা কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও। তিনি লিখেছেন, ‘হরিওম বাল্মীকিজি-র পরিবার জানিয়েছে যে, সরকার থেকে বলা হয়েছে তারা যেন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা না করে। সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেটা দরকার সেটা হল, অপরাধীদের কঠিন শাস্তি হওয়া। আমাদের চেষ্টা হল হরিওমজি-র পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, তাদের যে রকম ভাবে হোক সাহায্য করা। দেশের যে প্রান্তে দলিতদের উপরে অত্যাচার হবে, কংগ্রেস বিচারের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে’।
এরই মধ্যে, বিজেপি-শাসিত আর একটি রাজ্যেও আর এক দলিতের উপরে নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। মধ্যপ্রদেশের কাটনি জেলার ঘটনা। রাজকুমার চৌধরি নামে ওই দলিত যুবক অভিযোগ করেছেন, অবৈধ খনন নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাঁকে এবং তাঁর মাকে রড দিয়ে মারধর করা হয়। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান রামানুজ পাণ্ডের ছেলে রাজকুমারের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে হেনস্থা করেন এবং তাঁর গায়ে প্রস্রাব করে দেন বলেও অভিযোগ। পুলিশ রামানুজ, তাঁর ছেলে এবং কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। রামানুজ অবশ্য বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদ সংস্থা