নয়াদিল্লি ও কলকাতা, ২৭ অক্টোবর: পশ্চিমবঙ্গে ফের একশো দিনের কাজের প্রকল্প চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। সেই রায়ের বিরুদ্ধে নরেন্দ্র মোদী সরকারের মামলা সুপ্রিম কোর্ট পত্রপাঠ খারিজ করে দিল। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সওয়ালই শোনা হল না।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল রাজনৈতিক ও আইনি দিক থেকে বড় জয় হিসেবে দেখছে। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একে ‘ঐতিহাসিক জয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি ভোটে হেরে রাজ্যের টাকা আটকে দিয়েছিল। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘‘জমিদারেরা ইসি আর ইডিকে নিয়ে মাঠে নেমেছিল, ভোট আর কোর্ট, দু’জায়গাতেই হেরে গিয়েছে। এর থেকে শিক্ষা না নিলে ২০২৬-এ আরও বড় পরাজয় অপেক্ষা করছে।’’ বিজেপির যুক্তি, একশো দিনের কাজ নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই। রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগ আছে বলেই প্রকল্প
আটকে ছিল।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগে ২০২২-এর মার্চ থেকে এই প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে তৃণমূল ‘রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা’ বলে হাতিয়ার করেছিল। এই লড়াইয়ের মাঝে পড়ে গরিব মানুষ রোজগার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর ইউনিয়ন কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। গত ১৮ জুন হাই কোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয়, ১ অগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে একশো দিনের কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্র তা করেনি। তার বদলে ৩১ জুলাই হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে।
আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চে এই মামলা শুনানির জন্য উঠতেই বিচারপতিরা জানান, হাই কোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই বলে তাঁরা নিশ্চিত। তাই মামলা খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা কেন্দ্রের আইনি ক্ষমতার কথা বলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, তাঁরা হাই কোর্টের রায় বহাল রাখছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে খেতমজুর ইউনিয়নের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যের গরিব মানুষ আবার কাজ পাবেন। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব দু’গালে দু’টো থাপ্পড় খেল।’’ তাঁর বক্তব্য, এ বার বকেয়া আদায়ের দাবিতে লড়াই হবে। রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের হিসেব অনুযায়ী, একশো দিনের কাজে রাজ্যের বকেয়া প্রায় ৭ হাজার
কোটি টাকা।
এর আগে বকেয়া নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে আন্দোলন-বিক্ষোভ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বহিরাগত বাংলা-বিরোধী জমিদারদের আবার পরাজয় হল। এটা দিল্লির ঔদ্ধত্য ও অন্যায়ের সামনে মাথা নত না-করা বাংলার মানুষের ঐতিহাসিক জয়।’’ তবে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতির প্রমাণ মেলার পরেই এমজিএনআরইজিএস আইনের ২৭ নম্বর ধারায় ২০২২-এর মার্চ থেকে টাকা বন্ধ করা হয়। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের বক্তব্য ছিল, আমজনতার জন্য তৈরি প্রকল্প অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকতে পারে না। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ শর্ত আরোপ করতে পারবে। বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্র তাদের অনুসন্ধান চালাতে পারবে। এই প্রকল্পে কেন্দ্রের নির্দেশিকা রাজ্য সরকারকে মানতে হবে।
বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয়
প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের দাবি, “হাই কোর্টের যে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল নাচছে, সেই আদালতের পর্যবেক্ষণেই বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় দল অনিয়মের কথা বলেছে। একশো দিনের কাজ চালু নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।”