প্র: মহিলা সিরিয়াল কিলার ত্রৈলোক্য তারিণী দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন?
উ: হ্যাঁ, জ়ি ফাইভের ক্রাইম সিরিজ় ‘গণশক্র’-তে। আঠেরো শতকের একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে হলে আগে তার প্রেক্ষাপট জানা দরকার। ত্রৈলোক্যর উত্থানের সময়ে বিনোদিনীর মতো নারীও ছিলেন। আবার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তখন ‘দেবী চৌধুরাণী’র মতো উপন্যাসও লিখেছেন। ত্রৈলোক্যকে ঠকিয়ে পতিতা পল্লিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সাধারণ মেয়ের মতো ও বাঁচতে চায়নি, বরং চেয়েছিল যে-কোনও কাজেই সেরা হয়ে উঠতে। পরাধীন ভারতে নিজেকে স্বাধীন করতেই সে অপরাধের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। চরিত্রটি করার আগে অনেক পড়তে হয়েছে।
প্র: চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলা কতটা কঠিন ছিল?
উ: বিনোদিনী দাসী রামকৃষ্ণদেব ও গিরিশ ঘোষের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন, যা ত্রৈলোক্য পায়নি। তা হলে কি ওর জীবন শূন্য থেকে যেত? সেটা ও চায়নি। আর সেই জন্যই ২০০ বছর বাদেও তাকে নিয়ে এত কথা বলছি। নিজেকে নজিরবিহীন করে তুলেছিল সে। নিরাশার মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে আশার আলো দেখিয়েছিল, যা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
প্র: ত্রৈলোক্য তারিণীকে নিয়ে এর আগে অনেকে ছবি করার কথা ভেবেছিলেন?
উ: ঠিক। আর আমিও অনেক বছর ধরেই এই চরিত্রটি করার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। গত বছর দীপা মেহতা ঘোষণা করেছিলেন ত্রৈলোক্যকে নিয়ে ছবি করবেন। ত্রৈলোক্যকে নিয়েই দীপার লেখা বই ‘ত্রিনয়নী’।
প্র: বায়োপিকে কি প্রথম?
উ: না, ‘নাটকের মতো’ ছবিতে কেয়া চক্রবর্তীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু এই ছবিতে যে শতাব্দীর কথা বলছি, তা হিন্দিতে ‘বুলবুল’ সিরিজ়েই করেছিলাম।
প্র: আগে এ রকম চরিত্রে অভিনয় করলে সেই ছকেই বেঁধে দেওয়া হত...
উ: একটা সময় অবধি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করলেই ছাপ পড়ে যেত। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। মহিলাকেন্দ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ হচ্ছে। ‘কাবেরী’, ‘কালী’ সিরিজ়ে আমার কাজের ধারা ১০০ শতাংশ পরিবর্তন করেছি। ভিন্ন গল্প, আলাদা মেকআপ, নতুন-নতুন চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরতে ভালবাসি। ছবিতেও অনেক ধরনের মহিলা চরিত্রে কাজ করেছি। আসলে নিজের কাজে ব্যালান্স থাকা দরকার। টলিউডে শুধু পুরুষকেন্দ্রিক কাজ কেন হবে?
প্র: ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বলেই কি অন্ধকার জগতের গল্প দেখানো সম্ভব হয়েছে?
উ: অন্ধকার জগৎ নিয়ে কাজ করাটা শুরু হয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসার পরেই। আসলে এই রকম কাজ সিনেমার পর্দায় দেখানোটা কঠিন। দর্শক ভাল ভাবে না নিলে ছবি ব্যবসা করতে পারবে না।
প্র: অপরাধ প্রবণতার সংখ্যা এমনিতেই বাড়ছে। অপরাধীদের নিয়ে সিনেমা-সিরিজ় কি সেখানে ইন্ধন জোগায় না?
উ: কেন অপরাধী হয়ে উঠল, সে জায়গা থেকেই কিন্তু ‘গণশত্রু’। কী ভাবে অপরাধ করেছে তা আমাদের সকলের জানা। সিনেমায় নৈতিকতার জায়গা থাকতে পারে না। তা হলে তো সিনেমা হবে না। অপরাধী হয়ে কেউ জন্মায় না, পরিস্থিতি তাকে অপরাধী হতে সাহায্য করে। চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প বোনা হয়েছে।
প্র: আপনার পরের কাজ তো অন্য রকম?
উ: ‘বিবি পায়রা’ তো স্যাটায়ার। ও রকম নারীচরিত্রও আগে হয়নি। তার পর আছে ‘লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল’। দুটো ছবিই আসছে বড় পর্দায়।
প্র: হিন্দিতে কাজের খবর আছে?
উ: মুম্বইয়ে যে ভাল কাজ হচ্ছে এমন নয়, ওখানেও স্ট্রাগল রয়েছে। আমার কাছে অনেক সুযোগই এসেছে। সব তো মনে ধরে না। এটা শেষ করেই মুম্বই চলে যাব। নিখিল আডবানীর সিরিজ় ‘দ্য রেভোলিউশনারিজ়’-এ একটা চরিত্র করছি। পিরিয়ড ড্রামা। ওই কাজের অভিজ্ঞতাও আলাদা।
প্র: ‘এলার চার অধ্যায়’ থেকে ত্রৈলোক্যর চরিত্র... এখনও বলবেন কাজের খিদে রয়ে গিয়েছে?
উ: সিনেমার প্রতি ভালবাসাটা এখনও ভীষণ ভাবে রয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকের খিদে থাকে, আমার খিদেটা ভাল কাজের পর আরও বেড়ে যায়। এই যে অন্য ভাষায় এত বুদ্ধিদীপ্ত কাজ হচ্ছে, বাংলায় সেটা করতে পারছি না কেন?
প্র: এত ব্যস্ততার মধ্যেও সংসার আর কাজ ব্যালান্স করেন কী ভাবে?
উ: কলকাতা, মুম্বই দু’জায়গাতেই আমি থাকি। অর্জুনের সঙ্গে বিয়ের আগেই বলে রেখেছিলাম আমার প্রথম প্রেম কাজ, তার পর তুমি। ওর কাছেও প্রথম প্রেম গল্ফ, তার পর আমি। আসলে দু’টি মানুষের মন যদি ঠিক থাকে, বাকি কোনও সমস্যাই সংসারের ঘুঁটি ওলটপালট করতে পারে না।
ঈপ্সিতা বসু
ছবি: জয়দীপ দাস