ভয়ডরহীন ক্রিকেট নয়, রক্ষণাত্মক মনোভাব দেখাতে গিয়েই গুজরাতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনল বাংলা।
তৃতীয় দিনের শেষে ছ’উইকেট হারিয়ে বাংলার রান ১৭০। সব মিলিয়ে এগিয়ে ২৮২ রানে। তবে তৃতীয় দিনেই ডিক্লেয়ার করেনি বাংলা। যা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছেই। ১১২ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলেন অভিমন্যু ঈশ্বরনরা। দ্রুত রান করে বড় লক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলার সামনে। কিন্তু ঈশ্বরন, অভিষেক পোড়েলরা বাংলাকে দ্রুত বড় রানেও পৌঁছে দিতে পারেননি। চতুর্থ দিন সকালে আরও ৩০-৪০ রান যোগ করার পরে গুজরাতকে ব্যাট করতে পাঠানোর পরিকল্পনা বাংলা শিবিরের। মহম্মদ শামি, আকাশ দীপ থাকতে কেন গুজরাতকে তৃতীয় দিনের শেষে ব্যাট করতে পাঠানো হল না? বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বেশি ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বলছিলেন, ‘‘গুজরাতের ব্যাটিং বিভাগে গভীরতা আছে। অন্তত ৩২০-৩৩০ রানেএগিয়ে না থাকলে সমস্যা হতে পারে।’’
যে দলের ব্যাটিং নিয়ে বাংলা ভয় পাচ্ছে, তারা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ১৬৭ রানে। ছয় উইকেট নেন শাহবাজ় আহমেদ, তিন উইকেট মহম্মদ শামির। এ দিনই তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৫০ উইকেটর মাইলফলক ছুঁলেন। এক উইকেট আকাশ দীপের। তৃতীয় দিনের সকাল থেকে বল ভাল ঘুরতে শুরু করেছে। বাংলার হাতে শাহবাজ় আছেন। অনুষ্টুপ মজুমদারও লেগস্পিন করতে পারেন। তার পরেও কেন এত রক্ষণাত্মক মনোভাব? সকালের দেড় ঘণ্টা ছাড়া পেসাররা খুব একটা সুবিধা পাচ্ছেন না এই পিচ থেকে। বাংলা যদি সেই সময়টাই ব্যাটিং করে, আকাশ-শামিরা পরে বল করতে এসে পিচ থেকে সাহায্য আদায় করে নিতে পারবেন? লক্ষ্মী বলছিলেন, ‘‘আমরা সকালে চার-পাঁচ ওভার ব্যাট করব। তার মধ্যেই ৩০-৪০ রান তুলতে হবে। সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগাতেই হবে আমাদের। না হলে ৬ পয়েন্ট পাওয়া কঠিন।’’
প্রশ্ন উঠছে, বাংলার ব্যাটসম্যানেরা দ্রুত রান করার চেষ্টা করলেন না কেন? ৯৩ বলে ৫৪ রান করলেন সুদীপ ঘরামি। ৩৪ বলে ২৫ অভিমন্যুর। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের জায়গায় চোটের পরিবর্ত (এ বার থেকেই বোর্ড চালু করেছে এই ইনজুরি সাব) হিসেবে ব্যাট করতে আসা কাজি জুনেইদ সৈফি ১১ বলে ১ রান করে ফিরে যান। হতাশ করলেন অভিষেক পোড়েলও। ১০ বলে ১ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে অর্ধশতরান করা সুমন্ত গুপ্ত এই ইনিংসে করেন ১১ রান। একমাত্র শাহবাজ় আহমেদ দ্রুত রান করার চেষ্টা করেছিলেন। ১৫ বলে ২০ রান করেন তিনি। অনুষ্টুপ মজুমদারকে বাধ্য হয়ে মন্থর ব্যাটিং করতে হয়। এক দিকে তিনি উইকেট ধরে না থাকলে অলআউট হয়ে যেতে পারত বাংলা।
এটা ঠিকই যে, পিচে একটি বল অতিরিক্ত বাউন্স করছে তো অন্যটি হাঁটুর নীচে নামছে। বাঁ-হাতি স্পিনার সিদ্ধার্থ দেশাইয়ের বলে ২৪ রানের মাথায় বোল্ড হয়েছিলেন অনুষ্টুপ। বল তাঁর ব্যাটের নিচ দিয়ে আছড়ে পড়েছিল স্টাম্পে। কিন্তু নো-বল হওয়ায় বেঁচে যান অনুষ্টুপ, সঙ্গে রক্ষা পায় বাংলাও। অনুষ্টুপ যদি সেই
অবস্থায় আউট হয়ে যেতেন, চাপে থাকতে পারত বাংলা। গুজরাতের বাঁ-হাতি স্পিনার সিদ্ধার্থ দেশাইকে ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। দুই ইনিংস মিলিয়ে পেয়েছেন আট উইকেট। আবার বাংলার হয়ে সফল হয়েছেন স্পিনার শাহবাজ়। ছয় উইকেট রয়েছে তাঁর নামের পাশে। ব্যর্থ নন পেসাররাও। প্রথম ইনিংসে শামি ও আকাশ মিলিয়ে নেন চার উইকেট। গুজরাতের বাঁ-হাতি পেসার অর্জন নাগওয়াসওয়াল্লা এ দিন দুই উইকেট নিয়েছেন। তার মানে পিচে জোরে বোলার, স্পিনার সবার জন্যই সাহায্য রয়েছে।
সুদীপ ঘরামি বলছিলেন, ‘‘এখন যা রান আছে তাতেও আমরা জিততেই পারি। তবে ঝুঁকি নিতে চাইছি না। সকালে কয়েক ওভারের মধ্যে আরও ৩০-৪০ রান তোলার পরে ওদের ব্যাট করতে দেব। আমাদের যা বোলিং বিভাগ, তাতে ওদের অলআউট করতে সমস্যা হবে না। পিচে কিছু বল নিচু হয়ে যাচ্ছে, কয়েকটি বল বাউন্স করছে। স্পিনাররাও সাহায্য পাচ্ছে।’’
বাংলা শিবিরে খারাপ খবর, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের চোট। তাঁর বাঁ-পায়ের হাঁটুতে ‘পিসিএল টিয়ার’ হয়েছে। পস্টেরিয়র ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ছিঁড়ে গিয়েছে। এক মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। ত্রিপুরা ও সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে হয়তো সুদীপকে পাচ্ছে না বাংলা। তাঁর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ছাড়া পরের দু’টি ম্যাচ খেলতে হতে পারে বাংলাকে। তাই গুজরাতের বিরুদ্ধে ৬ পয়েন্ট তুলে রাখা আরওই জরুরি। শেষ ম্যাচে চতুর্থ দিনে দু’টি স্পেলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন মহম্মদ শামি। এই ম্যাচে উপস্থিত রয়েছেন জাতীয় নির্বাচক। তাঁর সামনে শেষ কামড় কি দেবেন না ভারতীয় পেসার? বাংলা শিবিরও তাকিয়ে আছে শামি, আকাশ, শাহবাজ় ত্রয়ীর দিকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: গুজরাত প্রথম ইনিংসে ১৬৭ (মনন হিংরাজিয়া ৮০, শাহবাজ় আহমেদ ৬-৩৪, মহম্মদ শামি ৩-৪৪)। বাংলা দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭০-৬ (অনুষ্টুপ মজুমদার ব্যাটিং ৪৪, সিদ্ধার্থ দেশাই ৪-৪৮)।