আপাতত অসমে নয় এসআইআর
নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি, ২৭ অক্টোবর: অসম চুক্তির পরে ঠিক হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ মধ্যরাত হবে অসমে নাগরিকত্ব নির্ধারণের ভিত্তি তারিখ। সেই মতো নাগরিকত্ব আইনে যুক্ত হয়েছিল বিশেষ ধারা। তার ৪৪ বছর পরে অসমে এনআরসির কাজ শুরু হয়, যার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ২০১৯ সালে। কিন্তু তার পরেও ৬ বছর গড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত এনআরসিতে পড়ল না রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতরের সিলমোহর! নির্ধারিত হল না অসমে আদতে নাগরিক কারা। এখনও নিশ্চিত করা গেল না অসমিয়ার সংজ্ঞাও। এই পরিস্থিতিতে, সোমবার দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানালেন, দ্বিতীয় দফায় দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজ শুরু হলেও আপাতত বাদ থাকছে অসম।
পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল, পুদুচেরি ও অসমে আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু জ্ঞানেশ জানালেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে অসমের জন্য আলাদা ধারা রয়েছে। এ ছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে অসমে নাগরিকত্ব যাচাইকরণ চলছে। গোটা দেশের জন্য এসআইআর সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি যেহেতু ২৪ জুন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই কারণে অসমে তা প্রযোজ্য হচ্ছে না। জ্ঞানেশ বলেন, অসমের জন্য আলাদা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। তার দিনক্ষণ জানায়নি কমিশন। নির্বাচন কমিশন অসমে নাগরিকত্বের পৃথক ধারা বলতে বুঝিয়েছে অসম আন্দোলনের পরে ১৯৮৫ সালে হওয়া অসম চুক্তি অনুযায়ী নাগরিকত্ব আইনে যুক্ত হওয়া ৬-এ ধারা। ওই ধারা অনুযায়ী ১৯৬৬-র ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১-এর ২৪ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত অসমে আসা বাংলাদেশিদের নাগরিকত্বের সুবিধা দেওয়া হবে। শর্ত হল, তাঁদের শরণার্থী হিসেবে নিজেদের নথিভুক্ত করাতে হবে। তারপরে আসা কাউকে দেওয়া হবে না নাগরিকত্ব। ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারির আগে ভারতে প্রবেশ করা সকলে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
এসআইআরের ক্ষেত্রে আরও এক বড় দেওয়াল ঝুলে থাকা এনআরসি। ২০১৮ সালের খসড়ায় প্রায় ৪০ লক্ষ নাম বাদ পড়ার পড়ে আগ বাড়িয়ে অমিত শাহ সংসদে তাঁদের সকলকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলে দাগিয়ে দেন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় বাদ পড়েন ১৯ লক্ষাধিক মানুষ। এ নিয়ে ফের মামলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। দীর্ঘদিন ধরে এনআরসি সংক্রান্ত মামলাগুলি শুনানিও হচ্ছে না।
এ দিকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের বিদেশি ট্রাইবুনালগুলিতে মোট ২,৪৪,১৪৪টি ডি বা সন্দেহজনক ভোটারের মামলা পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ১,৫৪,৮১৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ৪২,৯৮৯ জনকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে অসমে ডি ভোটারের সংখ্যা ১,১৮,১৩৪। এর মধ্যেই, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ভাঙতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিধানসভা ও লোকসভা কেন্দ্রের সীমানা পুনর্বিন্যাসও সেরে ফেলেছে। হিমন্ত বলেন, “নির্বাচন কমিশন থেকে যে নির্দেশই আসুক না কেন, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব। সারা দেশে এসআইআর হলে অসমেও হবে। এই বিষয়ে আমাদের মতামত ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে।”