স্ত্রীকে খুনের পরে মেয়েকে নিয়ে উধাও যুবক, পরে আত্মসমর্পণ
নিজস্ব সংবাদদাতা
বেড়াতে নিয়ে যাবে বলে বাচ্চা মেয়েকে সঙ্গে করে বেরিয়েছিল বাবা। কিছু ক্ষণ ঘোরানোর পরে এক সময়ে মেয়েকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে সে। এর পরে নিজে উধাও হয়ে যায়। পরে ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শাশুড়ি দেখেন, ঘরের দরজায় বাইরে থেকে ছিটকিনি দেওয়া। সেই ছিটকিনি খুলতেই দেখা যায়, বিছানায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন মহিলার মেয়ে। রাতে জানা যায়, ওই বধূকে খুন করে উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁর স্বামী। পরদিন, অর্থাৎ রবিবার থানায় আত্মসমর্পণ করে ওই যুবক।
পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার শ্যামপুকুর থানা এলাকার বাগবাজারের ডিসপেনসারি লেনে নিজের বাড়ি থেকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় পূজা পুরকাইত (২৪) নামে ওই তরুণীকে। তাঁকে বাগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। ঘটনার পর থেকে খোঁজ মিলছিল না পূজার স্বামী সুমিতের। রবিবার রাতে সে শ্যামপুকুর থানায় আত্মসমর্পণ করে।
তদন্তকারীরা জানান, পূজার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে, যাতে লেখা ছিল, ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’। সুইসাইড নোটের এ হেন বয়ান এবং পূজার দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। শনিবার রাতেই পূজার মা স্বপ্না দেবনাথ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে মেয়েকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, পূজার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক আছে সন্দেহে শুক্রবার রাতে তাঁকে গলা টিপে খুন করে সুমিত। তার পরে নিজেই সুইসাইড নোট লেখে। তদন্তকারীদের আরও অনুমান, স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী হতে চেয়েছিল সুমিত।
সুমিতের শাশুড়ি স্বপ্না সোমবার জানান, তাঁদের বাড়ি বাগবাজারের ৩ নম্বর বাস স্ট্যান্ডের কাছে। শুক্রবার পূজা ও সুমিত সেখান থেকে শ্যামপুকুরে নিজেদের বাড়িতে আসেন। তবে, ওই দম্পতি একমাত্র মেয়েকে রেখে এসেছিলেন দিদিমার কাছে। স্বপ্না জানান, শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ সুমিত তাঁকে ফোন করে বলে, পূজার শরীর খারাপ। সে কাজে বেরােবে না। স্বপ্নার কথায়, ‘‘জামাইয়ের কাছে মেয়ের শরীর খারাপের খবর শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। আমাদের অনুপস্থিতিতে সুমিত এসে মেয়েকে নিয়ে যায়। দুপুর তিনটে নাগাদ জামাইয়ের পাড়া থেকে এক জন ফোন করে জানান, নাতনি রাস্তায় ঘুরছে। সেই খবর পেয়ে আমি নাতনিকে আনতে ডিসপেনসারি লেনে যাই। মেয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখি, দরজায় বাইরে থেকে ছিটকিনি দেওয়া। ছিটকিনি খুলে ঢুকে দেখি, খাটে পড়ে আছে মেয়ের দেহ।’’
সুমিত ও পূজার নাবালিকা মেয়ে জানায়, শনিবার সকালে সে বাবার সঙ্গে গঙ্গার ধারে ঘুরতে গিয়েছিল। তার কথায়, ‘‘বাবা কিছু ক্ষণ আমাকে ঘুরিয়ে এক জায়গায় ছেড়ে দিয়ে বলে, ট্রামলাইন ধরে সোজা চলে যেতে। আমি সেই রাস্তা ধরে এলেও বাড়ি চিনতে না পেরে বাড়ির আশপাশে ঘুরছিলাম।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, সুমিত মেয়েকে নিয়ে জগন্নাথ ঘাটে গিয়েছিল। মা ও বাবা না থাকলে সে কী করবে, মেয়ের কাছে সে কথা জানতে চেয়েছিল সুমিত। অভিযুক্তের শ্বশুর বাসুদেব দেবনাথ জানান, সুমিত কেন মেয়েকে নিয়ে গঙ্গার ঘাটে গিয়েছিল, সেটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘জামাইয়ের মনে কী ছিল, আমরা জানি না। তা-ও আমরা ওর বিরুদ্ধে কোনও মামলা করতে চাই না।’’ ধৃত সুমিতকে সোমবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।