এর আগে শান্তির কথা বলে ডাক দেওয়া নাগরিক মিছিলে চড়াও হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। শুক্রবার কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় বাম ছাত্র, যুব ও শিক্ষক সংগঠনের প্রতিবাদী সমাবেশের দিকে তেড়ে গেল বিজেপির ‘তিরঙ্গা যাত্রা’! বামেদের সভা চলছিল শিক্ষকদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে। দেশের সেনাবাহিনীকে কুর্নিশ জানাতে পথে নামা বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা সেই সভাকে ঘিরেই ‘দেশদ্রোহী’, ‘পাকিস্তানের দালাল’ স্লোগান দিলেন। ছোড়া হল জুতো। আওয়াজ উঠল ‘গোলি মারো..’! কোনও ক্রমে পরিস্থিতি সামাল দিল পুলিশ।
বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের উপরে প্রথমে শাসক দলের লোকজন, রাতে পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে শুক্রবার দিনভর পথে নেমেছিল বিভিন্ন বিরোধী দল ও সংগঠন। কলেজ স্ট্রিটে কফি হাউজ চত্বরে সমাবেশ ছিল এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এবিটিএ, এবিপিটিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী সংগঠনের। পহেলগামে জঙ্গি হানার পরে পাকিস্তানকে ভারতীয় সেনার প্রত্যাঘাতকে কুর্নিশ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এ দিন বিকেলেই কলেজ স্ট্রিট থেকে শ্যামবাজার ‘তিরঙ্গা যাত্রা’র কর্মসূচি ছিল বিজেপির। বাম ছাত্র-যুবরা যে জায়গায় জড়ো হয়েছিলেন, যাত্রা সেখানে এলেই তাঁদের ‘পাকিস্তানের দালাল’-সহ নানা বিশেষণ দিয়ে ক্রমাগত ‘হুমকি’ দেওয়া হয় বিজেপির মিছিল থেকে। পুলিশ দু’পক্ষের মাঝে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। ডিওয়াইএফআইয়ের কলতান দাশগুপ্ত, কলকাতা জেলা সভাপতি সোহম মুখোপাধ্যায়, এসএফআইয়ের অর্জুন রায়েরা মানববন্ধন করে দাঁড়ান। তার পরেও মিছিল থেকে জুতো, লাঠি ছোড়া হয়। পুলিশ ক্রমাগত চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত মিছিলকে এগিয়ে দেয়।
বিজেপির মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, শমীক ভট্টাচার্য, অগ্নিমিত্রা পাল, লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো প্রমুখ। তাঁরা অবশ্য এই হামলার সময়ে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। পরে কলতান বলেছেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে সারা দেশ একজোট। আর বিজেপি-আরএসএস চেয়েছে বিভাজন ছড়াতে। এ রাজ্যে আমরা একজোটে শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতির প্রতিবাদ করছি। বিজেপি হতাশ। আসলে দুর্নীতিতে যুক্ত তৃণমূল নেতাই এখন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা।’’
শ্যামবাজারে বিজেপির মিছিলের শেষে সুকান্ত অবশ্য দাবি করেন, “আগে অনেকের জাতীয় পতাকা নিতে অসুবিধা হত। এখন তাঁরা আমাদের অনুকরণ করে জাতীয় পতাকা নিয়ে কর্মসূচি করবেন। যদি কারও সুমতি হয়, স্বাগত জানাচ্ছি।’’ মহিলা মোর্চার কর্মীরা এ দিন ‘অপারেশন সিঁদুরে’র সাফল্য উদযাপনে সিঁদুর খেলেছেন।
পরে অবশ্য বিধাননগরে শিক্ষকদের অবস্থানে যান শুভেন্দু। পুলিশের মার এবং সরকারি মদতে দুর্নীতির প্রতিবাদের পাশাপাশি সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের যুক্তি ন্যায়সঙ্গত। সেই পথে আপনারা এগিয়ে চলুন। যদি আমার কোনও সহযোগিতার দরকার হয়, তা হলে জানাবেন। আমি সেই চেষ্টা করব।’’ চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ তাঁর কাছে আবেদন করেছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁরা সাক্ষাৎ করতে চান। বিরোধী দলনেতা তাঁদের জানান, তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবেন। আরএসপি-সহ বামেদের একটি প্রতিনিধিদলও শিক্ষকদের ডাকে কনভেনশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতা যাওয়ার পরে ‘জটিলতা’য় তাঁদের অবশ্য আর বক্তৃতা করতে ডাকা হয়নি।
এ দিন ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত ধিক্কার মিছিল ছিল কংগ্রেসের। সেখানে থেকে প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে বরখাস্তের দাবি তোলেন। পুলিশি ‘বর্বরতার’ প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকায় পুলিশ। এক পুলিশকর্মীকে শুভঙ্কর প্রশ্ন করেন, “আজ ব্যারিকেড ভাঙা অন্যায় হলে, গত কাল বিকাশ ভবনের সামনে পুলিশ অন্যায় করেনি?” শুভঙ্কর বলেন, “নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি, দুর্নীতি মমতা সরকারের আমলে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আগে তো সর্বত্র দৌড়ে যেতেন। এখন কেন জায়গা করে দিচ্ছেন বিজেপিকে? তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।” শহরে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ-সভা করেছে এসইউসি, সিপিআই, আরএসপি-র ছাত্র সংগঠন পিএসইউ, ‘রাইট টু এডুকেশন ফোরাম’, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-সহ নানা সংগঠন ও মঞ্চ। ‘যোগ্য’ শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের উপরে পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে ১৯ মে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ডিএসও।