নিশানায় করাচি বন্দর, বোতলবন্দি পাক নৌসেনা
অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি, ১৬ মে: টার্গেট সেট! টার্গেট লক! করাচি বন্দর লক্ষ্য করে রীতিমতো ক্ষেপণাস্ত্র ‘লক’ করে ফেলেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী।
সামান্য বেচাল দেখলেই ভারতীয় রণতরী থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেত করাচি বন্দর লক্ষ্য করে। ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে করাচি বন্দর উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি, হামলা চালানোর লক্ষ্যে উত্তর আরবে সাগরে পাকিস্তানের জলসীমার বাইরে প্রস্তুত ছিল ভারতীয় নৌসেনার একাধিক জাহাজ ও ডুবোজাহাজ। ফলে আক্রমণাত্মক কোনও পদক্ষেপ তো দূর, নিজেদের বন্দর থেকে বার হওয়ার সাহস দেখায়নি পাক নৌবাহিনী।
পহেলগাম নাশকতার প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি শিবিরগুলি লক্ষ্য করে গত মঙ্গলবার মাঝরাতে অভিযান চালায় ভারত। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করে পাক সেনা। পহেলগাম কাণ্ডের সংঘাতের আশঙ্কায় আরব সাগরের দখল নেয় ভারতীয় নৌবাহিনী। শুরু করে যুদ্ধাভ্যাস।
গত বুধবার আরব সাগরে একটি যুদ্ধের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অনুশীলন করে ভারত। যা আসলে ছিল পাকিস্তানের উদ্দেশে বার্তা। বৃহস্পতিবার কার্যত করাচি বন্দরকে নিশানা করতে পাকিস্তানের জলসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি ভারতীয় রণতরী। ডিরেক্টর জেনারেল অব নেভাল অপারেশন ভাইস অ্যাডমিরাল এ এন প্রমোদ জানান, ওই সময়ে প্রয়োজনে করাচি বন্দরে হামলা চালানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল নৌবাহিনী। নৌসেনার তরফে জানানো হয়েছে, পহেলগাম কাণ্ডের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে আরবে সাগরে সক্রিয় হয় নৌবাহিনী। প্রমোদ বলেন, ‘‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাহিনীর কৌশলের পরিবর্তনের প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়াও নৌসেনাকর্মীরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন কিনা, বাহিনীর অস্ত্র ও যুদ্ধের উপকরণ যুদ্ধোপযোগী রয়েছে কিনা, বাহিনী নির্দিষ্ট নিশানায় লক্ষ্যভেদ করতে পারছে কিনা সে সবের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া হয়।
পাক নৌবাহিনীর মনোবল ভাঙতে গোড়াতেই আরব সাগরে ভাসানো হয় ভারতীয় নৌসেনার ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ-কে। এ ধরনের একটি দলে এয়ারক্র্যাফ্ট ক্যারিয়র-যুক্ত জাহাজ, অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন ও নৌবাহিনীর যুদ্ধবিমান মিগ ও হেলিকপ্টার থাকে। ওই বিমান বা হেলিকপ্টার একশো কিলোমিটারের মধ্যে শত্রুর যে কোনও আগ্রাসনকে রুখতে সক্ষম। সূত্রের মতে, এ বারের অভিযানে ব্যবহার করা হয় কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়্যারও। যাতে থাকা বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্র যে কোনও ধরনের আকাশ থেকে হওয়া হামলা রুখতে সক্ষম। সেনার অন্য দুই বাহিনীও ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে যুদ্ধাভ্যাসে যোগ দেয়। এ দিকে, ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাক সেনা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোয় জলপথেও তারা আক্রমণ শানাতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। যা রুখতে পাকিস্তানকে বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নৌসেনা। প্রমোদ বলেন, ‘‘ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজগুলি উত্তর আরব সাগরে পাক নৌবাহিনীর যে কোনও গতিবিধিকে রুখতে আগ্রাসী ভঙ্গি নিয়ে এগোতে শুরু করে। ওই সময়ে আমাদের বাহিনী সম্পূর্ণ ভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং আমরা আমাদের ইচ্ছে মতো করাচি-সহ সমুদ্র বা স্থলভূমিতে থাকা পাকিস্তানের যে কোনও লক্ষ্যে আঘাত হানতে প্রস্তুত ছিলাম।’’
সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় নৌসেনার ওই আগ্রাসী মনোভাব দেখে পাক নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী রক্ষণাত্মক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। আক্রমণ শানানোর কথা ভাবা তো দূর, পাকিস্তানের বেশির ভাগ জাহাজ বন্দরের ভিতরে বা উপকূলের খুব কাছে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। প্রমোদ বলেন, ‘‘পাক নৌবাহিনীর সব গতিবিধি লক্ষ্য রাখছিল ভারতীয় নৌসেনা। সে সময়ে পাক নৌসেনা যা করেছে এবং তাদের নৌবাহিনীর অবস্থান কোথায় ছিল সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য ছিল ভারতীয়
নৌসেনার কাছে।’’