পর্দাপারের বৃত্তান্ত
সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কতটা ছাপ পড়েছে দুই বাংলার সিনেমা শিল্পের আদানপ্রদানে?
ভারতীয় ছবিতে পাকিস্তানি অভিনেতাদের কাজ করায় এর আগেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কখনও দু’দেশের সম্পর্কে উন্নতি হলে তা আবার শিথিলও হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পাক শিল্পীদের এ দেশে কাজ করা বা তাঁদের কাজ সম্প্রচার করার ক্ষেত্রেও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের সঙ্গেও বর্তমানে এ দেশের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক জটিলতা চলছে। সেই পরিস্থিতিতে দুই বাংলার মধ্যে সিনেমা-সিরিজ়ের ক্ষেত্রে যে আদানপ্রদান চলত, তা এখন কী অবস্থায় রয়েছে?
বাংলাদেশের অভিনেতা, শিল্পীদের এ দেশে কাজের ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ঠিকই কিন্তু দু’দেশের সম্পর্কের ওঠা-পড়া বিনোদন দুনিয়াতেও কিছুটা ছাপ ফেলেছে। বেশ কিছু বাংলাদেশের অভিনেতা এ দেশে কাজ করতে আসার জন্য ভিসা পাননি। ফলে তাঁদের বাদ দিয়ে বিকল্প বাছতে হয়েছে নির্মাতাদের। দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে তৈরি হতে চলা কিছু সিনেমাও আপাতত স্থগিত।
যদিও জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শাকিব খান কিংবা আরিফিন শুভর মতো বাংলাদেশের মতো অভিনেতা সম্প্রতি এ দেশে এসেছেন কাজের সূত্রে। কারণ, তাঁদের অনেক দিন আগেই দীর্ঘমেয়াদি ভিসা করানো ছিল। অন্য দিকে, একটি ছবিতে দেবের বিপরীতে অভিনয় করার কথা ছিল তাসনিয়া ফারিনের। কিন্তু তিনি ভিসা পাননি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নির্মাতারাও তাঁর বদলে অন্য নায়িকার কথা ভাবছেন। ও পার বাংলার পরিচালক রায়হান রাফীর ‘লায়ন’ ছবিতে জিতের কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু সেই কাজও এখন বন্ধ।
বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে কাজ করে প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ। তারা জানাচ্ছে, ও পার বাংলার পরিস্থিতির জন্য কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকলেও, এখন তা আবার শুরু হয়েছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই-এ ও পার বাংলার সিরিজ় ‘জিম্মি’ মুক্তি পেয়েছে গত মার্চে। এই ইদে মুক্তিপ্রাপ্ত আফরান নিশোর ‘দাগি’ ছবির প্রযোজক এসভিএফ এবং বাংলাদেশের সংস্থা আলফা আই, চরকি। এর পর তারা শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’-এর প্রযোজনাও করছে। সেই ছবির কিছু অংশের শুটিং কলকাতায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ও পার বাংলার কিছু অভিনেতা ও কলাকুশলীর ভিসা সংক্রান্ত সমস্যার জন্য এখানে শুটিং করা সম্ভব হয়নি। তাই ছবির পুরো শুটিংই বাংলাদেশে হবে বলে খবর। যদিও ইদে মুক্তিপ্রাপ্ত শাকিবের ছবি ‘বরবাদ’-এর (দুই বাংলার প্রযোজনা) অনেকটা শুটিং এ দেশে হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে সময় ও পরিস্থিতির অনেকটাই তফাত হয়ে গিয়েছে।
টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির এক প্রযোজকের কথায়, “এসভিএফ-এর বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড অফিস রয়েছে। ওদের সঙ্গে বাকিদের তুলনা করা যাবে না। তবে অন্য কোনও প্রযোজকের সঙ্গে এখন যৌথ উদ্যোগে ছবি হচ্ছে না। বাংলাদেশে শিল্পীদের কাস্ট করার ক্ষেত্রেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না।” প্রসঙ্গত, ‘পদাতিক’ মুক্তির সময়ে চঞ্চল চৌধুরী বা ‘চালচিত্র’-র সময়ে জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এ দেশে আসতে পারেননি প্রচারের জন্য। অনেকের আশঙ্কা, ও পার বাংলার অভিনেতাকে কাস্ট করার পর কোনও সমস্যা হলে ক্ষতি হবে ছবির।
অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘ডিয়ার মা’ ছবিতে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন জয়া আহসান। জুলাই নাগাদ ছবিটি মুক্তি পেতে পারে। সেই সুবাদে এ দেশে আসার কথা জয়ার। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধাঙ্গিনী টু’তেও তাঁর থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। ও পার বাংলা থেকে ফোন জয়া জানালেন, আগামী মাসে তিনি এ দেশে আসতে পারেন। তাঁর এখানে কাজ করার ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা নেই ঠিকই, কিন্তু আগামী দিনে কী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান অভিনেত্রী।
যে সব পরিচালক তাঁদের ছবিতে ও পার বাংলার অভিনেতাকে নিতে চান, তাঁরা এখন কিছুটা সময় নিয়ে এগোতে চাইছেন। দু’দেশের রাজনৈতিক-কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে নজর রয়েছে বিনোদন ইন্ডাস্ট্রির।