পুতিনের সঙ্গে শান্তি বৈঠকে ট্রাম্পের দূত
মস্কো, ২৫ এপ্রিল: রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আজ দীর্ঘ আলোচনা করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত। এই আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিনের এক সহযোগী। ক্রেমলিনের তরফে এই বিষয়ে সরকারি ভাবে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেওয়া হলেও বৈঠক ইতিবাচক কি না, তা স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়নি। রাশিয়া-আমেরিকার আলোচনার এই পর্ব শুরু হতেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জ়েলেনস্কি বলেছেন, মস্কোর উপর এখন চাপসৃষ্টি করা প্রয়োজন। গতকাল কিভে হামলার প্রসঙ্গ টেনে সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘কিভে হামলা চালাতে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। জ়েলেনস্কির কথায়, ‘রাশিয়ার উপর চাপ না থাকার কারণেই এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্র তারা আমদানি করতে পারছে আর ইউক্রেনে তা ব্যবহার করছে’। ক্রিমিয়া নিয়েও ইউক্রেনের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন জ়েলেনস্কি।
দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বসার পর থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তৎপর হয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার দখল মেনে নিতে রাজি না থাকায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, শান্তি আলোচনায় বাধা দিচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তবে তারপরেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা থেকে সরে আসেননি ট্রাম্প। গতকালই এই বিষয় নিয়ে সমাজমাধ্যমে সরব হয়েছিলেন তিনি। রোজই অসংখ্য সেনার মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে পুতিনের উদ্দেশে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির, স্টপ!’ আর তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মস্কোয় আজ ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন পুতিন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুতিনের সহযোগী উরি উষাকভ। ওয়াশিংটনে রাশিয়ার এই প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত
সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আজকের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি আরও জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন সরাসরি আলোচনায় বসতে পারে কি না, সেই সম্ভাবনা নিয়ে তাঁরা আজ আলোচনা করেছেন। একই সঙ্গে ট্রাম্পের দূতের দাবি, আজকের এই আলোচনা রাশিয়া ও আমেরিকাকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে
সাহায্য করবে।
পুতিনের সঙ্গে উইটকফের আলোচনা পর্বের মধ্যেই জমি ছাড়ার ইঙ্গিত আসতে শুরু করেছে ইউক্রেন থেকে। একটি সাক্ষাৎকারে গতকাল ট্রাম্প মন্তব্য করেছিলেন, ক্রিমিয়া রাশিয়ার কাছেই থাকবে। সেই
বক্তব্য যে তিনি মানতে চান না, আজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
তবে কিভের মেয়র ভিটালি ক্লিটস্কো একটি সংবাদ সংস্থার প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, শান্তি সমঝোতার স্বার্থে কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে রাজি হতে পারে ইউক্রেন। শুরু থেকেই আমেরিকা এই বিষয় নিয়ে জ়েলেনস্কির উপর চাপসৃষ্টি করছিল। কিভের মেয়রের কথায়,
‘‘পরিস্থিতি যা, তাতে জমি ছাড়ার বিষয়ে চাপ রয়েছে। আমরা একে ঠিক প্রস্তাব বলে মনে করি না। তবে শান্তির স্বার্থে, হয়তো ক্ষণস্থায়ী শান্তির জন্যই এটা সমাধানসূত্র হয়ে উঠতে পারে।’’ তবে একই সঙ্গে ৫৩ বছর বয়সি প্রাক্তন মুষ্টিযোদ্ধার মন্তব্য, ‘‘ইউক্রেনের মানুষ রাশিয়ার দখলদারি মেনে নেবে না।’’ গতকালই রাশিয়ার হামলায় ১২ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ইউক্রেনে। সে দেশের জরুরি পরিষেবা বিভাগের মুখপাত্র পাবলো পেটরভ আজ জানিয়েছেন, মৃতদের খোঁজার পর্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। ‘‘ভাগ্যক্রমে ধ্বংসস্তূপের নীচে আমরা কোনও মৃতদেহ পাইনি’’— মন্তব্য করেছেন তিনি।
সংবাদ সংস্থা