প্রথা ভেঙে
রোমে সমাহিত পোপ ফ্রান্সিস
রোম, ২৬ এপ্রিল: মৃত্যুর পরেও প্রথা ভাঙলেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ভূগর্ভস্থ কক্ষে (গ্রোটোজ় অব দ্য ভ্যাটিকান) সমাহিত হওয়ার বিষয়টি কখনওই পছন্দ ছিল না তাঁর। তাঁর ইচ্ছে অনুসারে ভ্যাটিকান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, রোমের আলোময় সেন্ট মেরি মেজরিকা ব্যাসিলিকায় সমাহিত হলেন তিনি। সূত্রের খবর, প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় পরে কোনও পোপ ভ্যাটিকানের বাইরে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। আর সেন্ট মেরি মেজরিকা ব্যাসিলিকায় গত ৫০০ বছরে কোনও পোপকে সমাহিত করা হয়নি।
যদিও পোপ ফ্রান্সিসের কাছ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নতুন নয়। আর্জেন্টিনা-জাত হোর্হে মারিয়ো বের্গোলিয়ো-ই প্রথম পোপ, যিনি সরাসরি বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছেন। প্রতিবাদ করেছেন শরণার্থী সমস্যা, যুদ্ধ এবং গণহত্যার বিরুদ্ধ। এমনকি এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের প্রতিও সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন তিনি। তাঁর এই নরমপন্থায় বহু বার অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন গির্জার কট্টরপন্থীরা। তবে কোনও দিন তার পরোয়া তিনি করেননি। সমাহিত হওয়ার ইচ্ছাতেও তিনি
যেন বার্তা দিয়ে গেলেন, সাধারণের মধ্যে স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকতে চান তিনি। আজ যখন ভ্যাটিকান সিটি থেকে সেন্ট মেজরিকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাঁর মরদেহ, রোমের প্রতিটা রাস্তায় ছিল শোকস্তব্ধ
মানুষের ঢল।
আজ, শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টা (ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টা) নাগাদ সেন্ট পিটার্স স্ক্যোয়ারে সম্পন্ন হয় পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য। অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন কার্ডিনাল জিয়োভানি বাতিস্তা রে। ইটালির অন্তর্বর্তী মন্ত্রীর দাবি, অন্তত চার লক্ষ মানুষ শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ অন্তত ৫০ জন রাষ্ট্রনেতা এবং আরও ৮০টি দেশের প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানের শেষে সেন্ট মেরি মেজরিকা ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া হয় পোপের কফিন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পরে ট্রাম্প বলেছিলেন, পোপের শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি। ভ্যাটিকান সূত্রে খবর, অতিথিদের আসনের তৃতীয় সারিতে নির্দিষ্ট আসন রাখা হয়েছিল ট্রাম্পের জন্য। কূটনীতিকদের দাবি, পরিবেশ, শরণার্থী-সহ একাধিক বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিস ও ট্রাম্পের মধ্যে
মতানৈক্য ছিল। তৃতীয় সারিতে বসার বিষয়টি সেই মতানৈক্যের জের
হতে পারে।
এ দিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসে তুমুল বাগযুদ্ধের পরে শনিবার দেখা হল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই একান্তে বৈঠক করেন দু’জন। দুই তরফেই দাবি, বৈঠক ইতিবাচক। জ়েলেনস্কি সমাজমাধ্যমে একটি ছবি পোস্ট করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রাচীন কারুকার্য করা মেঝেতে দুটি চেয়ারে মুখোমুখি বসে গভীর আলোচনায় মগ্ন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। পরে ফরাসি
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টার্মারের সঙ্গেও দেখা হয় ট্রাম্প ও জ়েলেনস্কির। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, রোম থেকে ফিরেই সমাজমাধ্যমের পোস্টে পুতিনকে একহাত নিয়েছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।
ইচ্ছাপত্রে পোপ লিখেছিলেন, তাঁর সমাধি যেন অত্যন্ত সাধারণ হয়। কোনও বিশেষ নকশার প্রয়োজন নেই। সমাধির উপর লেখা থাকবে ‘ফ্রান্সিসকাস’। ব্যাসিলিকা সেন্ট মেরি মেজরিকার ঘণ্টাঘরটি রোমের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু। পাহাড়ের উপর অবস্থিত হওয়ায় রোম শহরের শীর্ষবিন্দু বলা চলে এটিকে। বড় বড় জানলা
দিয়ে রোদ এসে পড়ে ব্যাসিলিকার প্রাচীন মেঝেয়। মৃত্যুর পরেও আলোর অন্বেষণ থেকে বিরত থাকতে চাননি পোপ ফ্রান্সিস।
সংবাদ সংস্থা