সুপার কাপের প্রথম ম্যাচেই হেরে বিদায় নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিং। বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে শিবরাত্রির সলতের মতো জ্বলছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। দিনের শেষে সেই সলতেই হাজার ওয়াটের উজ্জ্বল বাতি হয়ে জ্বলে উঠল। শেষ আটে কেরল ব্লাস্টার্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল মোহনবাগান।
আইএসএল লিগ-শিল্ড এবং ট্রফি জিতে নতুন স্বপ্নের সন্ধান দিয়েছিলেন জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস, শুভাশিস বসু-রা। শনিবার সবুজ-মেরুনের রিজ়ার্ভ দলও যেন বার্তা দিল- স্বপ্ন তাঁরাও দেখাতে পারে।
শুক্রবারই সাংবাদিক বৈঠকে কোচ বাস্তব রায় জানিয়েছিলেন, তরুণ প্রতিভাদের কাছে নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ সুপার কাপ। তারকা নয়, দলগত সংহতিতে জোর দিতে চান। বাস্তবের কথারই বাস্তবায়ন করে দেখালেন সুহেল বাট, সালাহউদ্দিন আদনানরা। বোঝাপড়া দেখে এক বারও দেখে মনে হয়নি প্রথম বার সুপার কাপে দলটা খেলছে।
রক্ষণ মজবুত রেখে দল সাজিয়েছিলেন বাস্তব। আর সেই রক্ষণের চাপেই প্রথম দিকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারলেন না নোয়া সাদিউ, জেসুস খিমেনেসরা। এ দিনের খেলা দেখে এক বারও মনে হয়নি, এই কেরলই কোয়ার্টার ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল।
কেরলের বিরুদ্ধে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় মোহনবাগানের ‘কেরল’ ব্রিগেড। কেরলের সাহাল-সালাহউদ্দিন জুটি ২২ মিনিটে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেয়। তবে এ ক্ষেত্রে সাহালের থেকেও বেশি কৃতিত্ব সালাহউদ্দিনের। ডান দিক থেকে উঠে গতিতে নাওচা সিংহকে পরাস্ত করে মাপা ক্রস করেন সালাহউদ্দিন। সেই বল জালে জড়ান সাহাল। গোল খাওয়ার পরেই বারবার আক্রমণ শানাতে থাকেন নোয়া, জেসুস-রা। নোয়াকে নিষ্ক্রিয় রাখার কাজটা সুচারুভাবে সারলেন দীপেন্দু বিশ্বাস, নুনো রেইসরা। গোলের নীচে মোহনবাগানকে রক্ষা করে ধীরজ সিংহের হাতও। প্রথমার্ধে নিশ্চিত দু’টি গোল বাঁচান ধীরজ। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে মাঠ ছাড়ে মোহনবাগান।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও প্রত্যয়ী মোহনবাগানকে দেখা যায়। ৫১ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে দীপক টাংরির বাড়ানো বল ধরে আশিক কুরুনিয়ন দুরন্ত মাইনাস রাখেন। ডান পায়ের টোকায় ২-০ করেন সুহেল। তার পরেই যাবতীয় খেলা হয় মোহনবাগানের বক্সে। ৬৫ মিনিটে শ্রীকুট্টানের পাস থেকে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন খিমেনেস। কিন্তু তিনি সোজা গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন। দু’মিনিট পরে আরও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি। এই তালিকায় যুক্ত হয় পেপরাহে্র নামও। তিনি সোজা মারেন ধীরজের হাতে।
এখানেই সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনী শেষ হয়নি। অবশেষে ম্যাচের সংযুক্ত সময়ে (৯০+৪ মিনিট) সান্ত্বনাসূচক গোলটি করেন শ্রীকুট্টান। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার আর কোনও রাস্তা ছিল না। ফলে শেষ চারে চলে গেল মোহনবাগান।সুহেল তাঁর গোল উৎসর্গ করলেন কাশ্মীরের পহেলগামে নিহত পর্যটকদের স্মৃতির উদ্দেশে। আরও জানালেন, জঙ্গিহানার ঘটনা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পকেও ধ্বংস করছে।
শেষ আটের অন্য ম্যাচে এফসি গোয়া ২-১ হারিয়েছে পঞ্জাব এফসি-কে। ৫৭ মিনিটে পঞ্জাবকে এগিয়ে দেন পুলগা ভিদাল। ৮৯ মিনিটে ব্রাইসন ফার্নান্দেসের ক্রস বার করতে পারেননি আশিস প্রধান। সেই বল পেয়ে বোরখা এরেরা সমতা ফেরান। জয়সূচক গোলটিও রক্ষণের ভুলে করেন মহম্মদ ইয়াসির।
বুধবার সেমিফাইনালে মোহনবাগানের মুখোমুখি হবে গোয়া। অন্য দু’টি ম্যাচে রবিবার মুখোমুখি হবে ইন্টার কাশী ও মুম্বই সিটি এফসি এবং নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ও জামশেদপুর।
মোহনবাগান: ধীরজ সিংহ, আমনদীপ, নুনো রেইস, দীপেন্দু বিশ্বাস, অভিষেক সূর্যবংশী, সৌরভ ভানওয়ালা, দীপক টাংরি, সুহেল বাট (গ্লেন মার্টিন্স), সাহাল আব্দুল সামাদ, সালাহউদ্দিন আহমেদ,
আশিক কুরুনিয়ন।