চাপ বাড়াচ্ছে ভারত
আমদানির সঙ্গে বন্ধ জাহাজ, চিঠি
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ৩ মে: পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে পাকিস্তানের উপরে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রবল চাপ তৈরি করতে মোদী সরকার আরও একদফা সিদ্ধান্ত নিল। এ বারে ত্রিমুখী।
শনিবার সকাল থেকে ধাপে ধাপে তিনটি পদক্ষেপ করল নয়াদিল্লি। প্রথমে পাকিস্তান থেকে যাবতীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল। তার পরে পাকিস্তানের জাহাজের ভারতের বন্দরে নোঙর ফেলার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। শেষে পাকিস্তান থেকে আসা সব রকম চিঠি, পার্সেল আসাও বন্ধ করে দেওয়া হল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার ফের বলেছেন, সন্ত্রাসবাদী ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ও নির্ণায়ক পদক্ষেপ করতে সরকার দায়বদ্ধ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী দু’বার পাকিস্তানের নাম না করেও পহেলগামের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ও অকল্পনীয় পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এক দিকে যেমন সামরিক প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা চলছে, অন্য দিকে ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানে পণ্য রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের বিমানের জন্য ভারতের আকাশসীমাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
শনিবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের বৈদেশিক বাণিজ্য বিভাগ নির্দেশিকা জারি করেছে, পাকিস্তান থেকে সরাসরি বা ঘুরপথে সমস্ত পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তান থেকে পণ্য রফতানি বন্ধ করার ফলে পাকিস্তানের সিমেন্ট, বস্ত্র, কৃষি পণ্য রফতানি ধাক্কা খাবে। যদিও তাতে পাকিস্তানের উপরে কতখানি প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এমনিতেই পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা পণ্যের পরিমাণ এখন খুবই কম। ভারতের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাত্র ০.০৬ শতাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে হয়। ২০১৯-এ পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেই ভারত পাকিস্তান থেকে আসা পণ্যে ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল। তার মধ্যে ফল, আনাজ, সিমেন্ট, পেট্রোপণ্য, খনিজ আকরিকও রয়েছে। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ এমনিতেই কমে গিয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫-এর জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ৪ লক্ষ ২০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য ভারত আমদানি করেছিল। এক বছর আগেও এই সময়কালে প্রায় ২৮ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য পাকিস্তান থেকে এসেছিল। ভারত থেকে পাকিস্তানে পণ্য রফতানিও ১১০ কোটি ডলার থেকে নেমে ৪৪.৭৭ কোটি ডলার হয়েছে। সরাসরি বাণিজ্য না হলেও দুবাইয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য চলছিল। যার মধ্যে সোনা, গয়না, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিন পণ্যের কেনাবেচা চলত। ভারত আজ পাকিস্তান থেকে দুবাইয়ের মতো দেশের মাধ্যমে ঘুরপথে আমদানির রাস্তাও বন্ধ করে দিল। তার সঙ্গে ই-কমার্স পথে লেনদেন বন্ধ করতে আজ কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রক পাকিস্তান থেকে স্থল পথে বা আকাশ পথে যাবতীয় চিঠি, পার্সেল আসাও বন্ধ করে দিয়েছে।
একই ভাবে জাহাজ মন্ত্রক পাকিস্তানের জাহাজের ভারতের বন্দরে ঢোকার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ডিরেক্টর জেনারেল (শিপিং)-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, পাকিস্তানের কোনও জাহাজ ভারতের বন্দরে ঢুকবে না। ভারতের কোনও জাহাজও পাকিস্তানের বন্দরে নোঙর ফেলবে না। জাহাজ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তিক্ততার ফলে এমনিতেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে খুবই কম জাহাজ চলাচল করে। ২০২৪-এ মাত্র ১০টি পাকিস্তানের জাহাজ ভারতের বন্দরে এসেছিল। ভারতের মাত্র চারটি জাহাজ পাকিস্তানের বন্দরে গিয়েছিল। দু’দেশের মধ্যে যেটুকু যা বাণিজ্য, মূলত অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে স্থলপথের মাধ্যমেই হয়েছে।