রাজস্থান রয়্যালসের হারানোর কিছু নেই। অন্য দিকে কলকাতা নাইট রাইডার্সের একটিও পয়েন্ট হারালে চলবে না। টানা চারটি ম্যাচ জেতার লক্ষ্যে অভিযান শুরু হচ্ছে রবিবারের ইডেনে। যেখানে প্রচারের সমস্ত আলো কেড়ে নিয়েছে বিপক্ষ শিবিরের ১৪ বছরের বিস্ময় কিশোর।
কলকাতা নাইট রাইডার্স যদিও সেই কিশোর বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে ভাবছে না। তাদের উদ্বেগ অজিঙ্ক রাহানের চোট নিয়ে। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর মাঝের চামড়া ফেটে যায় রাহানের। কয়েকটি সেলাইও পড়ে। কিন্তু রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচে তাঁকে খেলাতে মরিয়া কেকেআর।
কেকেআর অধিনায়ক ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন। যদিও শনিবার নেটে ঢুকে পাঁচ মিনিটের বেশি ব্যাট হাতে রাখতে পারেননি। বেরিয়ে এসে চলে যান টিমের ডাক্তারের কাছে। তাঁর হাতে ড্রেসিং করিয়ে দেওয়া হয়। ফিল্ডিংও করার চেষ্টা করেন অধিনায়ক। কিন্তু ডান হাত দিয়ে বল ধরতে পারছিলেন না। বাঁ-হাতে কয়েকটি বল ধরার পরে ফের চলে যান ডাক্তারের কাছে।
অধিনায়কের মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ব্যথায় বেশ কাতর। তাঁকে ‘ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার’ হিসেবে খেলানো হলেও অবাক হওয়ার থাকবে না। ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে ব্যবহার করে সুনীল নারাইনকে নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হতেও পারে। শেষ ম্যাচে রাহানের চোটের পরে অধিনায়ক হিসেবে চমক দিয়েছেন নারাইন। রবিবার সে রকম কিছু দেখা যায় কি না সময়ই বলবে।
নাইটদের অন্যতম তারকা রভম্যান পাওয়েল মনে করেন, অধিনায়কের খেলতে সমস্যা হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অধিনায়ককে সুস্থ করে তোলার। গত ম্যাচের পরে ও কয়েকটি দিন বিশ্রাম পেয়েছে। আশা করি, ওর খেলতে অসুবিধে হবে না।’’ যোগ করেন, ‘‘আমাদের দলের হয়ে ধারাবাহিক ভাবে রান করছে অজিঙ্ক। ওর উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ।’’ অধিনায়ক খেললেও তিনি আদৌ বড় শট খেলতে পারেন কি না সেটাই দেখার।
ইডেনের বাইশ গজ নিয়ে যে চর্চা এত দিন ছিল, শনিবার তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। কারণ, নাইটদের পছন্দ মতোই পিচ দেওয়া হচ্ছে রবিবার। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পিচ থেকে স্পিনাররাই বেশি সাহায্য পাবেন। সি ভি বরুণ, সুনীল নারাইন ও অনুকূল রায়ের হাতে রয়েছে নাইটদের প্লে-অফ ভাগ্য। এই স্পিন-ত্রয়ী যদি জ্বলে ওঠে, সমস্যা বাড়বে যশস্বীদের।
রাজস্থান শিবিরের কোচ যদিও স্পিনারদের বিরুদ্ধে বরাবরই সফল ছিলেন। ক্রিকেটারদের উপরে রাহুল দ্রাবিড়ের গুরু-মন্ত্র কাজ করে কি না সময়ই বলবে। ইডেনে এ দিন দ্রাবিড় বেরিয়ে যাওয়ার পরেই আসেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কয়েক মিনিট আগে এলেই হয়তো পুরনো বন্ধুর সঙ্গে প্রিয় মাঠে দেখা হয়ে যেত। ২০০১ সালে এই মাঠেই স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্রিকেটজীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ জিতেছিলেন সৌরভ-দ্রাবিড়রা।
ইডেন অনেকেরই প্রিয় মঞ্চ। কিন্তু কেকেআর কখনওই চাইবে না, তাঁদের ডেরায় দাঁড়িয়ে দাপট দেখাক ১৪ বছরের কিশোর। বৈভব অবশ্য জানে, কোথায় গেলে প্রচারের আলো তাঁকে ঘিরে থাকবে। নাইটদের কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতকে দেখে পাঁ ছুঁয়ে প্রণাম করে যায় সে। নীতীশ রানার সঙ্গে এসে কেকেআরের বাকিদের সঙ্গে আলাপ করে। বৈভব আঁচ করতে পারছে, রাজস্থানের প্লে-অফ আশা শেষ হয়ে গেলেও তার উপরে প্রত্যেকের
নজর রয়েছে।
পাওয়েল যদিও বলছিলেন, বৈভবকে নিয়ে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা নেই নাইটদের। তাঁর কথায়, ‘‘এক জনকে নিয়ে ভাবলে চলবে না। ওদের প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই ভাল। তাদেরও আউট করতে হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘শুধু এক জনকে আউট করলে তো আর ম্যাচ জেতা যায় না।’’
ক্যারিবিয়ান তারকা চাইছেন, উপরের সারির ব্যাটসম্যানেরা কিছুটা রান তুলে মঞ্চ তৈরি করে দিক তাঁর ও রাসেলের জন্য। পাওয়েলের কথায়, ‘‘আমাদের দলের ভারতীয় ব্যাটসম্যানেরা ভাল। বেঙ্কটেশ, রিঙ্কু, অঙ্গকৃশরা ভাল খেলছে। উপরের দিকে ওদের রান করতে হবে। শেষের দিকে আমি আর রাসেল তো আছিই। ক্যারিবিয়ানরা কতটা শক্তি ধরে আমরা দেখিয়ে দেব।’’
এই আত্মবিশ্বাসটাই নাইট শিবিরে দেখা যাচ্ছিল না। যে দলে রাসেল, নারাইন ও পাওয়েলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানেরা খেলেন, তাঁরা আইপিএলে পিছিয়ে পড়ল কী করে? পাওয়েলের উত্তর, ‘‘১১২ রান তাড়া করতে না পারারই ফল।’’