হাই মাদ্রাসার ফলাফলে অনেক এগিয়ে মেয়েরাই
নিজস্ব সংবাদদাতা
পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিলের ফল প্রকাশ করল। এর মধ্যে হাই মাদ্রাসার মেধা তালিকায় প্রথম দশে ছেলেদের অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে মেয়েরা। হাই মাদ্রাসায় প্রথম দশে রয়েছে ১৫ জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ১২ জন, ছাত্র তিন জন। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি আবু তাহের কামরুদ্দিন শনিবার এই ফল প্রকাশ করে বলেন, “হাই মাদ্রাসা, আলিম এবং ফাজিল, তিনটিতেই এ বার মেধা তালিকায় মেয়েদের উপস্থিতি উজ্জ্বল। তার মধ্যে হাই মাদ্রাসায় মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেক এগিয়ে। হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল মিলিয়ে মেধা তালিকায় প্রথম দশে আছে ৩৭ জন। যার মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা ২০, মেয়েদের সংখ্যা ১৭।”
শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফলাফল। তাতে দেখা গিয়েছে, মেধা তালিকায় প্রথম দশে রয়েছে ৬৬ জন। ওই ৬৬ জনের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ১২। মাদ্রাসার পরীক্ষার মেধা তালিকায় মেয়েদের এমন উজ্জ্বল উপস্থিতির কারণ কী? আবু তাহেরের মতে, “মেয়েরা স্কুলছুট হচ্ছে কি না, দেখা হয় নিয়মিত। হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করা মেয়েদের জন্য আর্থিক সাহায্য এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০০ করা হয়েছে। নবম শ্রেণি থেকে প্রতিটি ছাত্রীকে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি হয়েছে। মেয়েদের হস্টেলে আধুনিক গ্রন্থাগার, জিম তৈরি করা হয়েছে।”
এ বার হাই মাদ্রাসা, আলিম ও ফাজিল মিলিয়ে মোট পরীক্ষা দিয়েছিল ৬০ হাজার ৩৭৪ জন। তাদের মধ্যে ছেলে ২৪ হাজার ৩৫৩ জন এবং মেয়ে ৩৬ হাজার ২১ জন। হাই মাদ্রাসা মাধ্যমিক পরীক্ষার সমতুল। আলিমও মাধ্যমিকের সমতুল, কিন্তু সেখানে ধর্মীয় কিছু বিষয় পড়ানো হয়। ফাজিল উচ্চ মাধ্যমিকের সমতুল। সেখানেও ধর্মীয় কিছু বিষয় পড়ানো হয়।
হাই মাদ্রাসার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৪৪ হাজার ৭৩ জন। তাদের মধ্যে পাশ করেছে ৩৯ হাজার ৮০৬ জন। পাশের হার ৯০.৩২ শতাংশ। হাই মাদ্রাসায় প্রথম হয়েছে দু’জন— মালদহের ফাহমিদা ইয়াসমিন এবং শাহিদা পরভিন। দু’জনেই পেয়েছে ৭৮০। দ্বিতীয় হয়েছে মালদহের শামসুন নেহার। সে পেয়েছে ৭৭৬। তৃতীয় হয়েছে মালদহের আলিফনুর খাতুন। সে পেয়েছে ৭৭২। হাই মাদ্রাসায় জেলা-ভিত্তিক ফলের মধ্যে সব থেকে ভাল করেছে পূর্ব মেদিনীপুর। সেখানে পাশের হার ৯৭.৫৪ শতাংশ। এর পরে আছে আলিপুরদুয়ার। সেখানে পাশের হার ৯৫.৬৩ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে আছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে পাশের হার ৯৫.২১ শতাংশ।
আলিমে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১১ হাজার ৫৮৮ জন। পাশ করেছে ১০ হাজার ৭৫৫ জন। পাশের হার ৯২.৮১ শতাংশ। আলিমে প্রথম মহম্মদ সৈয়দ আলম মণ্ডল। তার প্রাপ্ত নম্বর ৮৭৩। দ্বিতীয় মাসুম বিল্লা গাজি। পেয়েছে ৮৭০। তৃতীয় মহম্মদ ওমর ফারুক মণ্ডল। পেয়েছে ৮৫৩।
ফাজিলে মোট পরীক্ষার্থী ৪৭১৩ জন। পাশ করেছেন ৪৩৯০ জন। পাশের হার ৯৩.১৫ শতাংশ। প্রথম ইয়ামিন শেখ। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৫৬২। দ্বিতীয় রাইহান হোসেন ও বাকিবিল্লা গায়েন। পেয়েছেন ৫৫৯। তৃতীয় আব্দুল হালিম। পেয়েছেন ৫৫৮।
হাই মাদ্রাসায় ১৪টি ইংরেজি মাধ্যম রয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে প্রথম হয়েছে দেওয়ান জাভেদ আখতার। পেয়েছে ৭৫১। এ বার হাই মাদ্রাসায় অ-মুসলিম পরীক্ষার্থী ১০৪৬ জন। পাশ করেছে ৯২০ জন।
আবু তাহের জানান, স্ক্রুটিনি এবং রিভিউয়ের আবেদন করা যাবে সাত দিনের মধ্যে। তৎকালেও স্ক্রুটিনি এবং রিভিউয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। তৎকালে আবেদন করলে ১৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ হবে। তিনি জানান, স্ক্রুটিনি, রিভিউয়ের পরে মেধা তালিকা পরিবর্তন করা হতে পারে।