রবিবাসরীয় ইডেনে বসেছিল চাঁদের হাট। বলিউড-টলিউডের অভিনেত্রী থেকে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, সকলকেই মিলিয়ে দিয়ে গেল ক্রিকেট। শেষ ওভার পর্যন্ত আসন ছেড়ে ওঠা যাচ্ছিল না। উত্তেজনা ঢেকে রাখতে পারছিলেন না জুহি চাওলা থেকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ইংল্যান্ড ফুটবল দলের প্রাক্তন কোচ গ্যারেথ সাউথগেটও বিস্মিত। আইপিএলই পারে এক সুতোয় সব ব্যক্তিত্বদের বেঁধে রাখতে।
নাইট অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের স্ত্রী রাধিকা দোপাভকর রাহানে এসেছিলেন ম্যাচটি দেখতে। স্বামীর ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দুরন্ত ক্যাচ দেখে মুগ্ধ তিনি। ভাবতেই পারেননি, শেষ ওভারে জিতবে কেকেআর। বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেকটি ডেলিভারিতে উত্তেজনা লুকিয়ে ছিল। এক সময় ভেবেছিলাম ম্যাচটি হেরে যাব। একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে জিতি। অসাধারণ প্রাপ্তি।’’ যোগ করেন, ‘‘ইডেনে এর আগে অনেক ম্যাচ দেখেছি। কিন্তু এটা অন্যতম সেরা।’’
নাইটদের বিস্ময় স্পিনার সি ভি বরুণ মনে করেন, এই জয় প্লে-অফ খেলার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে দলে। সাংবাদিক বৈঠকে এসে বরুণ বলছিলেন, ‘‘এই ধরনের জয় যে কোনও দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে বাধ্য। আমাদের মধ্যেও প্লে-অফ খেলতে পারি এমন বিশ্বাস ফিরিয়েছে। আজ জেতার পরে মনে হচ্ছে, পরের তিনটিও জিতব।’’ যোগ করেন, ‘‘একটি দলকে উপরের দিকে উঠতে গেলে এই ধরনের কিছু ম্যাচ জিততে হয়। আজ জয়ের ছন্দ ফিরে পেলাম।’’
রিয়ান পরাগের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সময় চাপে পড়ে গিয়েছিলেন নাইটরা। বরুণ যদিও মেজাজ হারাননি। বলছিলেন, ‘‘রিয়ান নিঃসন্দেহে ভাল ইনিংস খেলেছে। আমরা ওর উইকেট নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। খুব একটা চাপ অনুভব করিনি। সকলের উপরে বিশ্বাস ছিল। জানতাম, কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসবই।’’
ম্যাচ শেষে কেকেআর ডাগ-আউটে ছিল উৎসবের পরিবেশ। জুহি চাওলা মাঠে গিয়ে প্রত্যেক ক্রিকেটারকে অভিনন্দন জানান। যা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছিল বৈভব সূর্যবংশী। মাথা নিচু করে রাজস্থান ডাগ-আউটের দিকে যাওয়ার সময় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে থমকে যায় সে। সটান চলে যায় সৌরভের সঙ্গে কথা বলতে। ১৪ বছরের কিশোরের সঙ্গে সৌরভ হাত মিলিয়ে তার হাত থেকে ব্যাট নিয়ে শ্যাডো করে দেখে নেন। বৈভবের ব্যাটের ওজন দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন সৌরভ। বৈভবকে বলেছেন, ‘‘বেশ ভারী ব্যাট ব্যবহার করো তো? তোমার খেলা আমি দেখেছি। এ ভাবেই চালিয়ে যাও।’’
বৈভব কি আশা করেছিল, ইডেনে এসে সৌরভের পরামর্শ নিয়ে ফিরবে? আশা করেননি তাঁর মা-বাবাও। প্রথম বারের মতো সপরিবার ছেলের খেলা দেখতে এসেছিলেন বৈভবের বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী। বলছিলেন, ‘‘আইপিএলের সৌজন্যে কত বড় ব্যক্তিত্বদের পরামর্শ পাচ্ছে। এটাই তো ওর কাছে আশীর্বাদ।’’ যোগ করেন, ‘‘আজ দ্রুত আউট হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওকে খেলার ধরন পাল্টাতে বারণ করা হয়েছে। রাহুল দ্রাবিড়ের মতো কোচ পেয়েছে। আর কী চাই?’’
আইপিএলের পরেও নাকি বৈভবকে প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছেন দ্রাবিড়। সঞ্জীবের কথায়, ‘‘মরসুম শেষ হলেই ওকে রাজস্থান রয়্যালসের হাই পারফরম্যান্স অ্যাকাডেমিতে যেতে বলেছেন দ্রাবিড় স্যর। সেখানেই কয়েক সপ্তাহ কাটাবে। রাহুল স্যরের নির্দেশ, আইপিএল শেষে যেন বাড়ি না ফিরে যায়। ওর স্বপ্ন দেশের হয়ে খেলা। আইপিএল খেলেই থেমে গেলে চলবে না। আমি তো সন্তুষ্ট হতে দেবই না। বহু বছর পরিশ্রম করেছি একটাই স্বপ্ন নিয়ে। ওকে দেশের জার্সিতে দেখতে চাই। সেই লক্ষ্যের দিকে ধীরে ধীরে এগোতে হবে।’’
সঞ্জীব যখন কথা বলছিলেন, বৈভবের দাদা ও মা একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রচারের আলোয় থাকতে চান না তাঁরা। কিন্তু বৈভবের ছোট ভাই এ সব বোঝে না। দাদার সঙ্গে দেখা করার তর সইছিল না তার। ছ’বছরের আকাশকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘‘তুমি বড় হয়ে কী হবে?’’ সে বলে, ‘‘আমি এই সব জানি না। বাবা যা বলবে তাই হবো।’’
বিহারের সমস্তিপুর থেকে আসা এই সূর্যবংশী পরিবারকে নিয়েই এখন চর্চা ক্রিকেটমহলে।