নয়াদিল্লি, ১০ মে: মহিলারা যদি বায়ুসেনার রাফাল যুদ্ধবিমান ওড়াতে পারেন, সেনার জাজ অ্যাডভোকেট জেনারেলের (জ্যাগ) পদে তাঁদের সংখ্যা কম হবে কেন তবে? সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই প্রশ্ন তুলেছে। লিঙ্গ নিরেপক্ষতার কথা বলেও কেন পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের জন্য অল্প সংখ্যক আসন রাখা হয়েছে, আদালত কেন্দ্রকে সেই প্রশ্ন করেছে।
সেনার জ্যাগ এন্ট্রি স্কিমে নিয়োগ চেয়ে শীর্ষ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন দুই মহিলা। তাঁরা এ ক্ষেত্রে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আসন সংখ্যায় অসামঞ্জস্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা দাবি করেন, এক জন চতুর্থ এবং অন্য জন পঞ্চম স্থান অর্জন করেছেন। কিন্তু পুরুষ প্রার্থীদের জন্য যেখানে ছ’টি আসন বরাদ্দ, মহিলাদের জন্য বরাদ্দ তিনটি। ফলে তাঁরা পুরুষ প্রার্থীদের থেকে যোগ্যতামানে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও নির্বাচিত হননি। মামলার রায় স্থগিত রাখলেও গত ৮ মে-র শুনানিতে বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি মনমোহনের বেঞ্চ অন্তর্বর্তী ভাবে কেন্দ্র ও সেনাকে নির্দেশ দিয়েছে আবেদনকারীদের আর্শনুর কউরকে জ্যাগ অফিসারদের প্রশিক্ষণের আগামী কোর্সে যুক্ত করতে। অন্য আবেদনকারী পিটিশনটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নৌসেনার চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সেখানেই থাকতে চান কি না, তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত।
২০২৩ সালের পর থেকে জ্যাগ পদে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ৫০:৫০ অনুপাতে আসন রয়েছে বলে উল্লেখ করে শুক্রবারও অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ঐশ্বর্য ভাটি কোর্টে দাবি করেন, ওই পদে নিয়োগ লিঙ্গ নিরপেক্ষই। কিন্তু তাঁর সেই দাবি মানতে চায়নি আদালত। যোগ্যতর মহিলারা যদি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন, তা হলে লিঙ্গ নিরপেক্ষতার যুক্তি কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তা জানতে চায় দুই বিচারপতির বেঞ্চ। বিচারপতি মনমোহনের পর্যবেক্ষণ, যদি দশ জন মহিলা উত্তীর্ণ হন ও তাঁদের প্রত্যেকেই যোগ্যতার নিরিখে পুরুষদের থেকে এগিয়ে থাকেন, তা হলে উচিত ওই মহিলাদের প্রত্যেককেই অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা। তিনি বলেন, “লিঙ্গ সাম্য মানে ৫০:৫০ শতাংশ নয়। লিঙ্গ সাম্যের অর্থ, আপনার লিঙ্গ পরিচয় যেটাই হোক না কেন, সেটা কোনও বিষয়ই নয়।”
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল যুক্তি দেন, সেনার সমস্ত শাখাতেই লিঙ্গ-নির্দিষ্ট শূন্যপদ রয়েছে। সেটা লোকবল বিচার করে ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে স্থির করা। তিনি উল্লেখ করেন, চিকিৎসা এবং দন্ত্যচিকিৎসার শাখাগুলি শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যই নির্দিষ্ট। সেখানে পুরুষরা জায়গা পান না। বস্তুত, ওই শাখাগুলিতে পুরুষদের সুযোগ দেওয়ার জন্য দিল্লি হাই কোর্টে একাধিক রিট পিটিশন দাখিল হয়েছে।
বিচারপতি মনমোহন বলেন, “নির্দিষ্ট শাখায় নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি (সেনা আইনের) ১২ নম্বর ধারায় আপনার বিশেষ অধিকার। এই ১২ নম্বর ধারায় আপনাকে সেই ক্ষমতা দেয়। জ্যাগ-এর মতো কিছু ক্ষেত্রে আপনারা তাঁদের (মহিলা) অনুমোদন দিয়েছেন। এক বার অনুমতি দিলে, তাঁদের নিয়োগ নির্দিষ্ট সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা কি অনুমোদনযোগ্য? এটা একটা বিতর্কিত বিষয়। এই প্রথম নিয়োগ বা সংখ্যা সংক্রান্ত কোনও সীমাবদ্ধতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আপনার এর আগের সওয়াল বা নথিতে এটা ছিল না। এখন, তৃতীয় লিখিত সওয়ালে আপনি প্রথম বার প্রাসঙ্গিক নীতিটি উপস্থাপন করেছেন, যা আপনাকে এই অধিকার দেয়। এখন এই নীতির উৎস খুঁজে বার করতে হবে। উৎস শুধুমাত্র ১২ নম্বর ধারা হতে পারে, কিন্তু সেই ধারা আপনাকে ওই ক্ষমতা দেয় না।”
কেন্দ্রের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, মহিলা জ্যাগ অফিসারদের আন্তর্জাতিক সীমান্তে লড়াইয়ের জন্য পাঠালে শত্রুপক্ষের হাতে তাঁদের যুদ্ধবন্দি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি দত্ত বলেছেন, তিনি মহিলা যুদ্ধবিমানচালক রাফাল ওড়াবেন বলে সংবাদপত্রে দেখেছেন। কেন্দ্রের যুক্তি অনুযায়ী, তিনিও তো তা হলে যুদ্ধবন্দি হয়ে যেতে পারেন! এই সূত্রেই তিনি বলেছেন, “যদি বিমান বাহিনীতে কোনও মহিলাকে রাফাল ওড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়, সেনার ক্ষেত্রে তা হলে অসুবিধাটা কোথায়? এটা অবশ্যই সম্ভব। আমরা বলার কেউ নই।” সংবাদ সংস্থা