হঠাৎ করেই গ্রামে রটে গিয়েছিল, সেখানে নাকি বিমানবন্দর হবে। প্রথমে কেউ বিশ্বাস করতে চাননি। কারণ, বছরের পর বছর ধরে সবাই সেখানে
চাষবাস করেন। সেখানে চাষের জমি কেড়ে নিয়ে বিমানবন্দর হবে! তা হয় নাকি! কিন্তু সকলে অবাক হয়ে দেখলেন, সত্যিই তাই হল। স্থানীয় প্রশাসন একরের পর একর জমি নিয়ে বিমানবন্দর তৈরির অনুমতি দিয়ে দিল। অরোরা গোমেজ়ের বয়স তখন মাত্র ১৫ বছর। তাঁর স্পষ্ট মনে আছে, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁর পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আদালত গোমেজ় পরিবারের পক্ষেই রায় দিয়েছিল। ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন অরোরারা। কিন্তু যখন আদালতের রায় বেরিয়েছিল, তখন বিমানবন্দরের কাজ শেষের মুখে। শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরের কাজ শেষ হল। কিন্তু সময়ের ঘড়ি জানাচ্ছে, সেই বিমানবন্দর গত বছর পর্যন্ত প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়ে ছিল। কারণ, কোনও বিমান চলাচলই তো সেখানে আর করে না!
২০২২ সালে স্পেনের ক্যাস্টিলা-লা মাঞ্চার প্রশাসনের অধীন ওই ফাঁকা বিমানবন্দরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে, মেটা সেখানে নিজেদের নতুন ডেটা সেন্টার তৈরির কথা ঘোষণা করায়। সংস্থা জানায়, ওই ডেটা সেন্টারের জন্য প্রায় ১.১ বিলিয়ন ইউরো খরচ করবে। গত বছর ক্যাস্টিলা-লা মাঞ্চা প্রশাসন ডেটা সেন্টারের প্রকল্পটিকে ঘোষণা করেছে ‘প্রজেক্ট অব সিঙ্গুলার ইন্টারেস্ট’ বা এলাকা, জনস্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে। যাতে কেউ আবার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে কাজ আটকে না দিতে পারে।
ঘোষণা শোনামাত্র, মূহূর্তে অরোরা গোমেজ়ের নিজের ১৫ বছরের স্মৃতি ফিরে আসে। বিমানবন্দরের জন্য একরের পর একর জমির চলে যাওয়া, জমিহারাদের বিপন্নতা, চাকরি, পুনর্বাসনের কথা বলেও তা না পাওয়া, আদালতে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই— সব মনে পড়ে যায়। অরোরা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত, পরিচিতিও রয়েছে তাঁর। তিনি ঠিক করলেন, অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি এ বার আর হতে দেবেন না। রুখে দাঁড়ালেন অরোরা।
ঠিক যেমন নেদারল্যান্ডসের জ়েওওল্ডে শহরে মেটার আর এক ডেটা সেন্টার তৈরির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সুসান স্কাপ। অথচ প্রস্তাবিত ডেটা সেন্টার নেদারল্যান্ডসের মধ্যে মেটার সর্ববৃহৎ ডেটা সেন্টার হতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, সুসান ও তাঁর দলবলের সম্মিলিত প্রতিরোধের কাছে মেটা ওই প্রকল্প বাতিল করতে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়।
অরোরা গোমেজ় ও সুসান স্কাপ পরস্পরকে চেনেন কি না, জানা নেই। কিন্তু তাঁদের কথা একটা বৃহৎ অংশের মানুষ জানতে পারলেন, যখন গত বছর ‘গ্রিন ইউরোপিয়ান জার্নাল’-এ অরোরা, সুসানের কথা তুলে ধরলেন পরিবেশকর্মী লেখক পাবলো হিমেনেজ আরান্দিয়া। পাবলো আরও লিখলেন, শুধু স্পেনের অরোরা গোমেজ় বা নেদারল্যান্ডসের সুসান স্কাপই নয়, সারা বিশ্বে চিলি, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, সিঙ্গাপুর-সহ একাধিক দেশেই মেটা, গুগল, মাইক্রোসফ্ট, অ্যামাজ়ন-সহ ‘জায়ান্ট’ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ডেটা সেন্টার তৈরির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শুরু হয়েছে।
কিন্তু কেন এই প্রতিবাদ?
আমাদের জীবন ক্রমশই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর হয়ে ওঠার কারণে যখন আগের থেকে অনেক কাজ নিমেষে হয়ে যাচ্ছে, জটিল সমস্যার সমাধান হচ্ছে দ্রুত, তখন কেন সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেই কাজের ডেটা সেন্টারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এক দল মানুষ? এটা নতুন কিছুর বিরুদ্ধে যেনতেন প্রকারে প্রতিবাদের জিগির, না কি প্রচারের বৃত্তে আসার মরিয়া চেষ্টা? প্রশ্নগুলো স্বাভাবিক ভাবেই উঠতে শুরু করেছে। তবে সব সমালোচনা, বিদ্রুপ উপেক্ষা করেও চলতি এআই ‘ট্রেন্ড’-এর বিরুদ্ধে গিয়ে ওই এক দল মানুষের একটাই কথা— এ ভাবে এআই-এর ডেটা সেন্টার হতে দেওয়া যাবে না। কারণ, তা হতে থাকলে সারা পৃথিবী এক সময় মরুভূমি হয়ে যাবে। মেটার ডেটা সেন্টার-সহ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলোর নির্বিচারে ডেটা সেন্টার তৈরির প্রতিবাদে এবং তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কারণে অরোরা গোমেজ় তৈরি করেছেন নতুন আন্দোলন—‘Tu Nube Seca Mi Río’। যার অর্থ হল— ‘তোমার ক্লাউড আমার নদী শুকিয়ে দিচ্ছে’।
*****
এআই-এর কারণে সারা পৃথিবী মরুভূমি হয়ে যাবে! নদী শুকিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু কেন?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে দু’বছর আগে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের প্রসঙ্গে চলে যেতে হবে। ওই গবেষণাপত্র জানিয়েছিল, ‘সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ’ এআই, জলের চাহিদার নিরিখে ‘সর্বগ্রাসী’ও। জানিয়েছিল, এআই-এর ‘বক্ষ জুড়ে তৃষ্ণা’র কথা। সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে ওই গবেষণা বলেছিল, ওপেন এআই-এর ‘চ্যাট জিপিটি’র মতো মডেলে ১০-৫০টি প্রশ্ন করলে গড়ে ৫০০ মিলিলিটার জল খরচ হয়, অর্থাৎ দু’বার কথোপকথনেই গড়ে ১ লিটার জল খরচ হয়। আরও জানা গিয়েছিল, জিপিটি-৩ মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে টেক্সাসের মাইক্রোসফ্টের ডেটা সেন্টারে প্রায় ৭ লক্ষ লিটার বিশুদ্ধ জল খরচ হয়েছিল। ‘মেকিং এআই লেস থার্স্টি: আনকভারিং অ্যান্ড অ্যাড্রেসিং দ্য সিক্রেট ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট অব এআই মডেলস’— শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে গবেষকদের পূর্বাভাস, ২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্ব জুড়ে এআই ব্যবহারের ফলে ৪.২ থেকে ৬.৬ বিলিয়ন ঘনমিটার জল খরচ হতে পারে— যা দিয়ে ৪ কোটি মানুষের জলের চাহিদা মেটানো সম্ভব। অর্থাৎ, এআই মানেই চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ছবি বানানোর অ্যাপ-সহ যে সমস্ত কিছু, সেই প্রযুক্তি চালাতে গেলে খরচ হয়ে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ জল। যার জেরে এআই হয়ে উঠছে এক নতুন ধরনের জল
সঙ্কটের উৎস।
*****
কিন্তু কেন এআই মডেল তৈরি, প্রশিক্ষণ বা চালানোর জন্য জলের প্রয়োজন হয়?
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এআই দেখতে ডিজিটাল হলেও, চ্যাটজিপিটি বা অন্য কোনও এআই চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় বিশাল সার্ভার সেন্টার। মানে ধরে নেওয়া যেতে পারে, একটা বিশাল ঘরে হাজার হাজার শক্তিশালী কম্পিউটার রাখা রয়েছে। যারা সেকেন্ডে লক্ষাধিক তথ্য বিশ্লেষণ করে। কিন্তু ওই কাজ করতে গিয়ে অত্যাধুনিক কম্পিউটারগুলো প্রচণ্ড গরম হয়ে যায়। ঠিক কতটা গরম? শুনলে চমকে উঠতে হবে। জানা গিয়েছে, আধুনিক এআই সার্ভার থেকে প্রতি মিনিটে ১২০ কিলোওয়াট পর্যন্ত তাপ নির্গত হয়। এ যেন এক বর্গমিটারে ১২০টা হিটার এক সঙ্গে চলছে, এতটাই গরম! তখন তা ঠান্ডা করতে দরকার হয় জল-নির্ভর কুলিং সিস্টেম। তা-ও অপরিশোধিত জল নয়। একদম পরিস্রুত, পানযোগ্য জল। কারণ অপরিশোধিত জলে মিশে থাকা খনিজ পদার্থে কম্পিউটারের ক্ষতি হতে পারে। অর্থাৎ, বিশ্ব জুড়ে গুগল, মাইক্রোসফ্ট, মেটা, অ্যামাজ়ন-সহ বড় টেক-সংস্থাগুলির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতার ‘প্রাণকেন্দ্র’ ডেটা সেন্টারগুলোকে কোটি কোটি লিটার জলের বিনিময়ে শীতল করা হচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। এআই চালানোর শক্তিশালী চিপ তৈরি হয় সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাক্টরিতে। সেখানেও ব্যবহৃত হয় ‘আল্ট্রাপিয়োর ওয়াটার’— যা এতটাই বিশুদ্ধ যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। তাই যত বড় ও শক্তিশালী মডেল প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তত বেশি জল লাগে।
ফলে এই অবস্থায় ভবিষ্যতের কথা ছেড়ে দিন। এখনও পর্যন্ত বড় টেক-সংস্থাগুলি যে পরিমাণ জল খরচ করে ফেলেছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। যেমন ২০২২ সালে গুগলের ডেটা সেন্টারগুলো খরচ করেছে ২১০০ কোটি লিটার পানযোগ্য জল। মাইক্রোসফ্টের খরচও ছিল প্রায় একই রকম। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০২৭ সালের মধ্যে এআই-এর জল খরচ হতে পারে সমগ্র ব্রিটেনের ছ’মাসের জল ব্যবহারের সমান!
*****
কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। বরং চরম জলসঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়ানো বিশ্বকে পথ দেখাবে এআই, এটাই তো প্রত্যাশিত ছিল। অবশ্য তেমনটা যে হয়নি একেবারেই, তা নয়। যেমন সিঙ্গাপুরে ‘স্মার্ট ওয়াটার গ্রিড’ প্রকল্পে এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে পাইপলাইনের ছিদ্র নির্ভুল ভাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি পুরো শহরে নির্দিষ্ট ভাবে জল বণ্টনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। যার ফলে প্রায় পাঁচ শতাংশ জল বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সমীক্ষা বলছে, পাইপলাইনে ছিদ্র থাকার কারণে সারা পৃথিবীতে প্রায় ৩০ শতাংশ জল নষ্ট হয়। সিঙ্গাপুর সেই জায়গায় দেখিয়েছে, এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই পরিমাণ অপচয় রোখা সম্ভব। তা ছাড়া ভবিষ্যতে কতটা জল লাগতে পারে, তার হিসাব বলে দিতে পারে এআই। তা জেনে কোনও দেশ, রাজ্য, শহর বা এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে জল সরবরাহ করা যেতে পারে। আবার জল পরিশোধন কেন্দ্রে এআই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে সামগ্রিক পরিশোধন পদ্ধতিই দ্রুততর ও নির্ভুল হতে পারে। তবে এআই প্রযুক্তি সবচেয়ে বেশি দরকারি ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে কৃষির ক্ষেত্রে। কারণ, বিশ্বে ব্যবহৃত জলের প্রায় ৭০ শতাংশই লাগে কৃষিকাজের জন্য। ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে সেই পরিমাণ প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সেখানে কখন জল লাগবে বা কতটা জল লাগবে, এআই-এর মাধ্যমে জানা গেলে ২০ শতাংশেরও বেশি জল সাশ্রয় সম্ভব হবে। ফলে এআই-কে কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটাই সবচেয়েগুরুত্বপূর্ণ।
এ দিকে সম্মিলিত সমালোচনা, প্রতিবাদের মুখে পড়ে মেটা, গুগল, মাইক্রোসফ্ট, অ্যামাজ়ন-সহ ‘টেক জায়ান্ট’রা ২০৩০ সালের মধ্যে ‘ওয়াটার পজ়িটিভ’ হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, যে পরিমাণ জল তারা পরিবেশ থেকে নিচ্ছে, তার থেকে বেশি পরিমাণ জল, নদী সংরক্ষণ, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বা ভূগর্ভস্থ জলস্তর পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেবে বলে অঙ্গীকার করেছে তারা। যেমন মেটা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ওয়াটার সাসটেনেবিলিটি’ বিভাগে ‘এভরি ড্রপ ম্যাটারস’ বলে বড়-বড় হরফে লিখে রেখেছে। আবার গুগলের প্রতিশ্রুতি—‘পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ জল। আমরা জল নিরাপত্তা রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ করছি।’ মাইক্রোসফ্টের দাবি, তারা কিছু প্রকল্প কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। সেই সঙ্গে ‘জ়িরো ওয়াটার’ ডেটা সেন্টারের পরিকল্পনাও প্রকাশ করেছে।
*****
কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। সৌজন্যে ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এবং ‘সোর্সমেটিরিয়াল’ নামক এক সংস্থার যৌথ অন্তর্তদন্তে উঠে আসা একের পর এক উদ্বেগজনক তথ্য। তাদের অনুসন্ধান জানিয়েছে, অ্যামাজ়ন, মাইক্রোসফ্ট, গুগল বেছে-বেছে ইতিমধ্যেই এমন এলাকায় ডেটা সেন্টার তৈরি করছে যেখানে জলঘাটতি প্রবল বা যে এলাকাগুলি শুষ্ক। গুলিয়ে যাচ্ছে? এক দিকে বলা হচ্ছে এআই-এর ডেটা সেন্টার ঠান্ডা রাখতে প্রচুর জল দরকার হয়, আবার বলা হচ্ছে, ওই ডেটা সেন্টারগুলো নাকি শুষ্ক এলাকায় তৈরি হচ্ছে! স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে না কথাগুলো?— না, হচ্ছে না। কেন, তা জানতে গেলে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন, তা শুনতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় ধাতব যন্ত্রপাতিতে মরচে ধরার আশঙ্কা বেশি। সেই কারণে ডেটা সেন্টার নির্মাতা সংস্থাগুলি সাধারণত সমুদ্র থেকে দূরে, আর্দ্রতাহীন শুষ্ক জায়গা পছন্দ করে, যেখানে সেন্টারগুলি অক্ষত থাকে। কিন্তু তা করতে গিয়ে ওই প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলো স্থানীয় কৃষি ও জনজীবনের জল উৎসকেই শুকিয়ে দিচ্ছে।
বিষয়টা অনেকটা এ রকম— ধরুন, আমি-আপনি এমন একটা জায়গায় বাস করি, এই যেমন কলকাতারই কোনও একটা অংশ, যেখানে জলের জোগান এমনিতেই কম। এ বার সেখানে হঠাৎ কোনও এক এআই সংস্থা নিজেদের ডেটা সেন্টার তৈরি করল। সরকারও তাদের ছাড়পত্র দিয়ে দিল। তার পর শুরু হল ডেটা সেন্টারের আসল খেলা। একেই অপ্রতুল জল নিয়ে আমার-আপনার মধ্যে টানাটানি চলছিল, তাতে সরাসরি ভাগ বসাল এআই। আমার-আপনার জল কেড়ে নিয়ে ঠান্ডা হতে থাকল ওই সংস্থার ডেটা সেন্টার। ভেবে দেখুন, তখন আমার-আপনার পরিস্থিতি কী হতে পারে? তেমনই ঘটছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়।
২০২৩ সালে মাইক্রোসফ্টই জানিয়েছিল, তাদের ব্যবহৃত জলের ৪২% এসেছে জলসঙ্কটগ্রস্ত অঞ্চল থেকে। গুগলের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ছিল ১৫%। অ্যামাজ়ন এখনও কোনও পরিসংখ্যান দেয়নি। আরও চিন্তার বিষয়। খরার পূর্বাভাস রয়েছে, এমন অঞ্চলকেও ছাড়ছে না সংস্থাগুলো। যেমন চিলি। সেখানে ২০৪০ সাল পর্যন্ত খরার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও সান্টিয়াগোতে ১৬টি নতুন ডেটা সেন্টার তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বিরোধিতার সম্মুখীন হলেও রাষ্ট্রের মদতে ‘টেক-জায়ান্ট’রা নিজেদের ডেটা সেন্টারের জন্য পরিস্রুত, পানীয় জল শুষে নেওয়ার ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে! বিশেষ করে এমন এক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, যখন বিশ্বের জলের ভাঁড়ার ক্রমশ নিঃশেষ হওয়ার পথে।
*****
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিশ শতকের কেন্দ্রে ছিল তেলের জন্য যুদ্ধ। কিন্তু একুশ শতকের লড়াইয়ের কেন্দ্রে উঠে এসেছে জল। প্রশ্ন উঠেছে, জলবায়ু পরিবর্তন, জলের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি কি ক্রমশই সমগ্র বিশ্বকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে? সেই ১৯৮৫ সাল থেকে জলযুদ্ধের আশঙ্কার কথা ধারাবাহিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধানদের মুখে শোনা গিয়েছে। তার পরও পরিস্থিতি ধারাবাহিক ভাবে খারাপ হচ্ছে। কারণ, বিশ শতকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় দ্বিগুণ হারে বেড়েছে জলের ব্যবহার। বিশ্বের একাধিক শহর এই মুহূর্তে ‘ওয়াটার স্ট্রেসড’। ২০১২ থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রতি বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল রিস্কস বাই ইমপ্যাক্ট’ তালিকায় প্রথম পাঁচটি ‘বিপদ’-এর মধ্যে রয়েছে জলসঙ্কট।
স্পষ্টতই জল এখন শুধুই পরিবেশগত বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা কূটনৈতিক, কৌশলগত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে। একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংগঠনের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ চরম জলসঙ্কটে পড়বেন। ২০১৪ সালে ১৭টি দেশে জলের তীব্র সঙ্কট ছিল, ২০৪০-এর মধ্যে সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৩টিতে। বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ জনসংখ্যার বাস, দক্ষিণ এশিয়া— সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের অন্যতম। হিমালয়ের হিমবাহ, যা ১.৯ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের পানীয় জলের উৎস, তা দ্রুত গলে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ না কমানো গেলে হিন্দুকুশ হিমালয় অঞ্চলকে ২১০০ সালের মধ্যে ৭৫% হিমবাহ হারাতে হতে পারে। এর ফলে নদীর প্রবাহ হবে অনিয়মিত— ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপালের জন্য জল ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে আরও অনিশ্চিত। অন্য দিকে, সাব-সাহারান আফ্রিকায়, ইথিয়োপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়ায় দীর্ঘ খরায় জীবিকা ও পশুপালন ধ্বংস হয়ে গেছে। জলের উৎস নিয়ে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ বেড়েছে। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন যত খামখেয়ালি হয়ে উঠছে, ততই বাড়ছে জল সংক্রান্ত উত্তেজনা ও সংঘর্ষ। তার মধ্যে যোগ হয়েছে এআই-প্রতিযোগিতায় নামা সংস্থাগুলির মধ্যে ডেটা সেন্টার তৈরির হুড়োহুড়ি। ফলে বাস্তবিকই আগামী দিনের যুদ্ধ জ্বালানির জন্য নয়— জলের জন্যই হতে পারে।
এর ঝলক এর মধ্যেই পাওয়া গিয়েছে। বিশ্বজনীন জল সংঘাতের তথ্য লিপিবদ্ধ করে গবেষণা সংস্থা ‘প্যাসিফিক ইনস্টিটিউট’। তাদের ‘ওয়াটার কনফ্লিক্ট ক্রোনোলজি’ জানাচ্ছে, গত দশকে জল নিয়ে হিংসার ঘটনা বিপজ্জনক হারে বেড়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ১,৪৭৩টি জল-সংক্রান্ত হিংসা ও সংঘর্ষের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকা। জল নিয়ে সংঘর্ষমূলক মোট ঘটনার যথাক্রমে ৫৭ ও ২৪ শতাংশ ঘটেছে এশিয়া ও আফ্রিকায়। অর্থাৎ, বিশেষজ্ঞেরা জলের জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সেটাই ছোটখাটো ঘটনার মধ্যে দিয়ে ক্রমাগত সত্যি হয়ে উঠছে।
*****
চিন্তার বিষয়, এশিয়ায় জলকেন্দ্রিক মোট সংঘর্ষের বড় অংশই হয়েছে ভারতে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘গ্লোবাল স্টাডি অন হোমিসাইড রিপোর্ট’ সরাসরি বলছে—ভারতে জলের জন্য রক্তপাত ক্রমেই স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে উঠছে। দেশে প্রতি পাঁচটি খুনের মধ্যে একটি হচ্ছে জলের জন্য! ২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে ভারতে ২০% পারস্পরিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জলঘাটতির কারণে। চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি, হায়দরাবাদ—একের পর এক শহরে ক্রমশ জলের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। চাহিদার সঙ্গে সরবরাহে সাযুজ্য না থাকায়, আবার পরিস্রুত জলের পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় লাখ লাখ মানুষ নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন ট্যাঙ্কার ও কমিউনিটি ট্যাপের উপর— যা আজ হয়ে উঠেছে সংঘাতের উৎস।
এত তথ্য, পরিসংখ্যানে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে? ছেড়ে দিন। ভাবুন, আমার-আপনার এলাকায় একেই জল কম আসে। তার মধ্যে এক দিন জলের প্লান্টে কী সব যেন মেরামতির কাজ হবে,
তার জন্য সারা দিন জল আসবে না। পুরসভা থেকে জলের গাড়ি পাঠানো হবে। এ বার সেই জলের গাড়ির উপরে আমি-আপনি হুমড়ি খেয়ে পড়ব না? কে আগে জল পাব, তা নিয়ে কাড়াকাড়ি,
ধাক্কাধাক্কি এ সব হবে না? ভীষণ ভাবে হবে। আর সেটাই হচ্ছে।
গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো লোকসভায় তথ্য পেশ করে কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করে নিয়েছে, দেশের ভূগর্ভস্থ জলসম্পদ মারাত্মক চাপে, বহু অঞ্চলে জলস্তর বিপজ্জনক ভাবে নেমে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় ভূগর্ভস্থ জল বোর্ডের ২০১৮ সালের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কিছু অঞ্চলে জলস্তর ৪০ মিটারেরও নীচে— যা অত্যন্ত বিপজ্জনক ইঙ্গিত। ভারত প্রতি বছর নিজের ৬২% ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করছে— যা দীর্ঘমেয়াদে জলের সঙ্কট অনিবার্য করে তুলেছে। জানা যাচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের বার্ষিক প্রয়োজন হতে পারে ১,১৮০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (বিসিএম) জল, অথচ পাওয়া যাবে মাত্র ১,১৩৭ বিসিএম! এই ঘাটতির ফলে ২০৫০ নাগাদ ভারতের জিডিপি-তে ৬% হ্রাস ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা।
*****
কিন্তু জলসঙ্কট থেকে মুক্তির কি কোনও পথই নেই? কোনও ভাবে জলের জন্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়াকে আটকানো যাবে না?
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অবশ্যই আছে। এআই প্রযুক্তিকে ‘জলবান্ধব’ করার পাশাপাশি জল অপচয় আটকানোর জন্য প্রশাসনিক, নাগরিক-সহ সব মহলের সক্রিয়তা প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল রাজনৈতিক সদিচ্ছা। বিনা কারণে জল অপচয় করলে তার জন্য কড়া শাস্তি দেওয়া। তথ্য বলছে, শুধুমাত্র অবহেলা, অসাবধানতার কারণে সারা দেশে প্রতি দিন অপচয় হয় প্রায় ৪,৯০০ কোটি লিটার জল। হাত-পা ধোওয়া, দাঁত মাজা, বাসন মাজা, বাড়ি-অফিসের জলের ট্যাঙ্ক উপচে পড়া, গাড়ি ধোওয়া, শাওয়ারে অনেক ক্ষণ ধরে স্নানে খরচ হয়ে যাচ্ছে বারিধারা।
অথচ পানযোগ্য জলের অপব্যবহার এ দেশে অপরাধ। আর সেই অপরাধে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় শাস্তিই হতে পারে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আইন থাকলেও তার কার্যকারিতা নিয়েই সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে দেশের অন্য শহরে জল অপচয়ের জন্য জরিমানা ধার্যের উদাহরণ থাকলেও এ রাজ্যে সে সবের বালাই নেই। বরং ‘জলকর’ শব্দেই অ্যালার্জি রয়েছে শাসক দলের। অথচ জল অপচয়ের নিরিখে এ শহর দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে। কলকাতা পুরসভার নিজস্ব পরিসংখ্যানই বলছে, প্রতি দিন প্রায় ১৫৪ কোটি লিটার পরিশোধিত জল সরবরাহ করা হয় শহরে। যার মধ্যে দৈনিক সাড়ে ৩৬ কোটি লিটার বা ২৪ লক্ষ নাগরিকের সারাদিনের ব্যবহারিক প্রয়োজন মিটে যেত, এমন বিপুল পরিমাণ জল নালা-নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
জলসঙ্কটময় জীবন কেমন হতে পারে, তা খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল, যখন ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে আনন্দবাজার পত্রিকা-র হয়ে খরা ‘কভার’ করতে যেতে হয়। খরা-বিদীর্ণ অন্ধ্রপ্রদেশ একটা জিনিসই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিল, জল বস্তুটা কত মূল্যবান। শুধু জল নেই বলে গ্রামের পর গ্রামে শুধু কৃষকদের আত্মহত্যা। জল নেই বলে ফাটল-দীর্ণ মাটি শুকনো-খটখটে। প্রতি দিন কৃষকেরা রেডিয়ো-টেলিভিশনের সামনে বসে আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনেন— কবে বৃষ্টি হবে? এ বছর আদৌ হবে তো? গত বছর তো হয়নি। এমন বুভুক্ষের মতো সেই খবর শোনার ধরন, এ যেন নিরন্ন মানুষের দু’মুঠো অন্নের সন্ধানে যাত্রা। অন্ন না পেয়ে তার পর হতাশায় ডুবে যাওয়া। কোনও গ্রামের মোড়ের কলে যে দিন জল আসবে, সে দিন মাঝরাত থেকে জলের পাত্র নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো।
জল নেই বলে বাড়ির ছোটদেরও কোথায় জল পাওয়া যাবে, তা খুঁজতে বার করে দেওয়া। বাড়ির শুকনো কলের মুখের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকা, এটা জেনেও যে সেটায় আর কোনও দিনও জল আসবে না। কখনও জল পাওয়া গেলে তার প্রতিটা কণাকে এমন অসম্ভব আদর, স্নেহ দিয়ে আগলে রাখা, যেমন ভাবে সদ্যোজাতকে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে মা। জল নেই বলে নিজের বসতবাড়ি বিক্রি করে, নিজের পূর্বপুরুষের ভিটে ছেড়ে সন্তান-সন্ততি নিয়ে ভিনরাজ্যে অনিশ্চিত জীবনের খোঁজে বেরিয়ে পড়া।
জল নেই বলে আস্তে-আস্তে কোনও গ্রামের জনশূন্য হয়ে যাওয়া, বাড়ির পূর্বপুরুষদের সময় থেকে রাখা গরুর দল, যারা পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ, নিজেদের জীবন-প্রাণেরও একটা অংশ, তাদের বিক্রি করে দেওয়া, ছিন্ন করে দেওয়া প্রাণের সঙ্গে প্রাণের সম্পর্ক। শুধু জল নেই বলে।
সেখানে আমি-আপনি, আমাদের, যাঁদের জলসঙ্কটে এখনও পড়তে হয়নি, তাঁরা ভাগ্যবান। কল খুললেই জল পড়ে। তাই বুঝতে পারি না জলের আসল মূল্য কী। কী ভাবে একটা জীবন, একটা পরিবার, একটা গোটা গ্রাম, একটা গোটা এলাকার বাসিন্দাদের চিন্তা, বেঁচে থাকাকে জল নিয়ন্ত্রণ করে। সেই জগতে এআই নেই, চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি নেই, ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট বা মেটা এআই নেই, রয়েছে শুধু ‘জল কবে পাব?’র বিপন্নতা। ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত এই একটিই চিন্তা জীবনের সমস্ত কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। ওই জগতে ‘জল জীবন’ শুধু কথার কথা নয়, আক্ষরিক অর্থেই জলই জীবন। আর আমরা অনায়াসে জল পাই বলে হয়তো অনায়াসে তা খরচ করে ফেলি। যেখানে এ দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লক্ষ মানুষের জীবনের একটাই প্রশ্ন, ‘বৃষ্টি হবে তো? জল পাব তো?’ কারণ, জলের জোগান অফুরান নয়। ভূগর্ভস্থ জল তুলে ভূমিগর্ভকে ক্রমশ শূন্য করে দিচ্ছি আমরা। আমাদেরই অপরিণামদর্শিতায়, অপচয়ে, স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে জল ভবিষ্যতে না পাওয়া গেলে— যে বিপদঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে অনেক জায়গাতেই— এক বারও ভেবে-দেখেছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী ভাবে বাঁচবে? তাদের জীবনও শুধু এই একটি চিন্তাতেই কাটবে না তো— ‘জল পাব তো?’, বা ‘কোথায় একটু জল পাব?’
জীবন পাল্টে যায়, জীবনের যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা, বেঁচে থাকার কৌশল, শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি পাল্টে যায়— শুধু জল নেই বলে!