পাক সন্ত্রাস রুখতে আন্তরিক
নয় আমেরিকা, খোঁচা সঙ্ঘের
বিপ্রর্ষি চট্টোপাধ্যায়
ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক বিবৃতিকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নে বিদ্ধ করছেন বিরোধীরা। তার মধ্যেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) ইংরেজি মুখপত্রে দাবি করা হল, পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে আমেরিকা আন্তরিক নয়।
পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যায় সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক পঙ্কজ জগন্নাথ জয়সওয়ালের লেখা প্রবন্ধে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদের ‘প্রচ্ছন্ন মদতদাতা’ হিসেবে আমেরিকা ও চিনকে এক পংক্তিতে বসিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে। পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদকে ক্যানসারের সঙ্গে তুলনা করে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান সম্পর্কে বিশ্বের তাবড় নেতারা জানেন, অস্ত্রোপচার কিংবা রেডিয়েশন থেরাপি, কোনও কিছুতেই সেই ক্যানসার কোষ নির্মূল হওয়ার নয়’। ওই প্রবন্ধে স্পষ্ট বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র, বিশেষত পশ্চিমী দুনিয়ার ভূমিকা ‘বাগাড়ম্বরে’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ
থেকে গিয়েছে।
আরএসএসের মুখপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে পশ্চিমী দুনিয়ার অন্য রকম ধারণা আছে। নিজেদের দেশ আক্রান্ত হলে তখন তারা শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বাস করে। কিন্তু অন্য দেশের ক্ষেত্রে তাদের সেই ভূমিকা দেখা যায় না। সেই সঙ্গেই দাবি করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে আমেরিকা এবং চিন পাকিস্তানকে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং অস্ত্রের জোগান দিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের আবহে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার পাকিস্তানকে যে অর্থ সাহায্য করেছে, সেই বিষয়টিও উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়েছে, পশ্চিমী দেশগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অর্থ ভাণ্ডার সর্বদা ‘নোংরা রাজনীতির জন্য এই নোংরা অর্থের জোগান’ বজায় রাখে। সেই সঙ্গে আমেরিকা ও চিনকে ভবিষ্যতে এই অমানবিক আচরণের ফল ভুগতে হবে বলেও সাবধান করে দেওয়া হয়েছে!
ভারত নিজস্ব সামরিক ক্ষমতায় ভর করে আমেরিকা ও চিনের তৈরি অস্ত্র ভান্ডারকে ভোঁতা করে দিয়েছে, সেই সত্য উপলব্ধি করেই আমেরিকা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘অযাচিত ভাবে’ মধ্যস্থতা করতে চেয়েছে— সেই দাবিও করা হয়েছে আরএসএসের পত্রিকায়। বলা হয়েছে, আমেরিকা ও চিনের উদ্দেশ্য আইএসআই-এর মতো সংগঠনকে ব্যবহার করে অস্থিরতা তৈরি করে ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া। লেখক দাবি করেছেন, ট্রাম্পের আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ চিনের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধের একটি সমঝোতার রাস্তা খুঁজে বার করা, যা তাঁর পাকিস্তানে বিনিয়োগ ও ভারতে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখে ট্রাম্প ‘অযাচিত’ ভাবে দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতায় ভূমিকা নিতে চেয়েছেন।
সঙ্ঘের পত্রিকায় আমেরিকার এই ভূমিকার কথা প্রকাশিত হওয়ার পরে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, ‘‘ভারতের উপরে চলা সন্ত্রাসবাদী আক্রমণের মোকাবিলায় ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশ আন্তরিক নয়। ভারত এখন অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে নেই। এখন ১৪০ কোটি ভারতীয় সঙ্ঘবদ্ধ। ভারত তার নিজের শক্তিতে এবং নিজের কৌশলে এই সন্ত্রাসবাদকে জবাব দেবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাবাহিনী স্পষ্ট ভাষায় এই কথা জানিয়ে দিয়েছেন।’’ পাশাপাশি, সঙ্ঘের পূর্বাঞ্চলীয় ক্ষেত্র প্রচারপ্রমুখ জিষ্ণু বসু বলেছেন, ‘‘ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শত্রু-মিত্র সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করে দেশের সুরক্ষা ও উন্নতির জন্য পদক্ষেপ করা উচিত।’’