প্র: দুই খুদেকে নিয়ে কেমন চলছে?
উ: দারুণ। কবীর হওয়ার সময়ে কখনও ভাবিনি দ্বিতীয় সন্তান নেব। আমি নিজেও একমাত্র সন্তান। কিন্তু কবীর একটু বড় হওয়ার পর মনে হচ্ছিল ওর একজন সঙ্গী হলে ভাল। বোনকে পেয়ে ও ভীষণ খুশি। আমার মাল্টিটাস্কিং যে কোন পর্যায়ে চলে গিয়েছে বলে বোঝাতে পারব না। তবে জীবনটা সম্পূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
প্র: রাতে ঘুম হচ্ছে?
উ: আমাকে দেখে যদি কিছু বোঝা না যায়, তার পুরো কৃতিত্ব মেকআপ আর্টিস্ট, স্টাইলিস্টের (হাসি)! মেয়ের সবে পাঁচ মাস, রাতে তিন-চার ঘণ্টা ঘুম হওয়াটাই বিলাসিতা।
প্র: কবীরের সময়ে অনেকটা বিরতি নিয়েছিলেন। এ বার বেশ আগেই কাজে ফিরলেন?
উ: প্রথম বার অনেক কিছু জানতাম না, বুঝতাম না। তবে এখন শুধু ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’-এর প্রচার নিয়েই ব্যস্ত। আজ বেরোনোর আগে সব কিছু প্ল্যান করে এসেছি।
প্র: মা হওয়ার পরে ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কি কোনও বদল এসেছে বা আসবে?
উ: খুব বেশি ভাবিনি এটা নিয়ে। একটা ছবির প্রস্তাব এসেছিল, তখন আমার ডেলিভারি একদম সামনে। ছবিটা একজন মা আর বাচ্চার গল্প, কিন্তু শেষটা সুন্দর ছিল না। করতে পারিনি। আমার এনার্জির সঙ্গে মিলছিল না। যখন আমরা কোনও ছবি করতে রাজি হই, শুটিং শুরুর অনেক আগে থেকে ওই চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাই। ওই ছবিটা করতে গেলে আমার মানসিক চাপ হত, যেটা আমি নিতে চাইনি। করিনা কপূরের ‘দ্য বাকিংহাম মার্ডার্স’ দেখে অবাক হয়েছিলাম! একজন মা হিসেবে উনি কী করে ওই চরিত্রটা করলেন! আর ব্যক্তিগত ভাবে আমি এমন ছবি দেখতে পছন্দ করি, যেটা ভাল লাগা তৈরি করবে। মানুষের জীবনে সমস্যা কম নেই, তার পর সিনেমা হলে গিয়েও মন ভার করা ছবি দেখতে ভাল লাগে না।
প্র: সেই জায়গা থেকেই কি পুরোদস্তুর বিনোদন মূলক ছবি ‘সোনার কেল্লায় যকের ধন’ করা?
উ: এই ছবিটা বাড়ির বাচ্চা থেকে বড় সকলের ভাল লাগার মতো। সোনার কেল্লা, পরশপাথর, মুকুল, পুনর্জন্ম, দুষ্টু লোক... নস্ট্যালজিয়া ভরপুর। সায়ন্তন (ঘোষাল) আর সৌগত (বসু) খুব সুন্দর করে ‘সোনার কেল্লা’র বিষয়গুলো এখানে মিশিয়েছে। ছবিটার মধ্য দিয়ে নিজেদের মতো করে সত্যজিৎ রায়কে ট্রিবিউট দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। খুব বড় স্কেলে হয়েছে ছবিটা, ম্যাগনাম ওপাস। বড় পর্দায় দেখার মতো।
প্র: বেশির ভাগ অংশই তো জয়সলমেরে শুটিং?
উ: হ্যাঁ, কলকাতায় মোটে দু’-তিন দিন শুট হয়েছে। বাকিটা জয়সলমেরে। রাজস্থানে বেড়াতে গিয়েছি আগে, এই প্রথম শুটিং করলাম। কত টুরিস্ট মুকুলের বাড়ি দেখতে আসেন এখনও। তার মধ্যে অনেক বিদেশি। এর থেকে বোঝা যায় গোটা বিশ্বে সত্যজিৎ রায় কতটা সমাদৃত।
প্র: অ্যাকশন দৃশ্য করতে হয়েছে?
উ: আমাকে করতে হয়নি তবে পরমব্রত আর গৌরব প্রচুর অ্যাকশন করেছে। রুবি চ্যাটার্জি এখন সাইকায়াট্রিস্ট। মুকুলের সঙ্গে এই জায়গাতেই রুবির বন্ডিং তৈরি হয়।
প্র: পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন?
উ: ভীষণ ভাবে। কর্মফল যেমন আছে, তেমনই পুনর্জন্ম। আগের জন্মের অনেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমরা জন্মাই। একজন সাইকায়াট্রিস্ট আছেন ব্রায়ান ওয়াইস, উনি একবার একটি ছোট মেয়েকে হিপনোটাইজ় করেছিলেন। মেয়েটির কিছু সমস্যা হচ্ছিল সে থেরাপির জন্য গিয়েছিল ডাক্তারের কাছে...
প্র: ‘মেনি লাইভস, মেনি মাস্টার্স’ বইটির কথা বলছেন?
উ: হ্যাঁ, বইটা আমাকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করেছিল। পরে নিজের অতীত সম্পর্কেও কিছু বিষয় জেনেছি।
প্র: তাই?
উ: কী জেনেছি, এটা এখানে বলতে চাই না। ব্রায়ান ওয়াইসের এক ছাত্র এসেছিলেন কলকাতায়। সেটা জানতে পেরে গিয়েছিলাম। ইন্টারেস্টিং কিছু বিষয় জেনেছিলাম, তাতে যে আশ্চর্য হয়েছিলাম এমন নয়।
প্র: এর পর কী কাজ করছেন?
উ: ‘একটি খুনির সন্ধানে মিতিন’, ‘স্বার্থপর’ এই ছবি দুটো তৈরি আছে। আর নতুন চিত্রনাট্য পড়ছি।
প্র: দর্শক কিন্তু আপনাকে রোম্যান্টিক ছবিতেও চান।
উ: (জোর হাসি) পরিণত প্রেমের কাহিনি হলে করতেই পারি। আসলে আমি কোনও দিন বিষয় স্থির করে ছবি বাছাই করিনি। একটা পুরনো কথা মনে পড়ে গেল। সদ্য নায়িকা হয়েছি, বাড়ির ল্যান্ডলাইনে সারাক্ষণ ভক্তদের ফোন আসত। মা নিয়ম করে দিয়েছিল, রবিবার একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমি ফোনে কথা বলব। কেউ ফোন করলে, তাকে রবিবার করতে বলা হত। আমি নিয়ম করে ওই সময়টায় কথা বলতাম। আমি আজ যা হয়েছি, সবটা ভক্তদের জন্য। ওঁদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনতাম। সকলের পছন্দ মতো কাজ হয়তো করতে পারব না। কিন্তু ওঁদের মতামতকে আমি মূল্য দিয়েছি।
প্র: ভক্তদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুবিধে বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনি সমাজমাধ্যমে ততটা সক্রিয় নন।
উ: আমি যে প্রাইভেট পার্সন, এত দিনে ভক্তরাও বুঝে গিয়েছেন সেটা। তবে ছবির প্রচারের সময়ে এই মাধ্যমের সূত্রেই আমি জানতে পারি, তাঁরা কী ভাবছেন। আমার নিজের কথা তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।
প্র: এই ইন্ডাস্ট্রিতে বোধহয় এমন কেউ নেই যিনি সমাজমাধ্যমে ট্রোলড হননি। ব্যতিক্রম আপনি।
উ: ওরে বাবা এ সব বলবেন না (হাসি)! হয়তো প্রচণ্ড বোরিং পার্সন বলে ট্রোলড হইনি।
প্র: আপনি ট্রোলড হননি, ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার কোনও শত্রু নেই... বিনোদন দুনিয়ায় এতটা স্বচ্ছ ইমেজ রাখা সম্ভব?
উ: কোনও মানুষের সঙ্গে জাজমেন্ট ছাড়া মিশতে হবে, তা হলেই বোঝা যাবে জীবনটা আসলে খুব সহজ-সরল। আমার সঙ্গে কারও মতে মিলছে না মানে সে খারাপ বা ভুল, এটা নয়। নিজের ভাইবোন, মা-বাবার সঙ্গেও আমাদের মতে মেলে না। তা হলে বাইরের একজনের সঙ্গে মতের মিল না হওয়াই স্বাভাবিক। আমরা নিজেরা জীবনটা জটিল বানাই, তার পর বলি, ওহ কী কমপ্লিকেটেড। সাদা পরিষ্কার চশমায় জীবনটা দেখতে হবে।
প্র: আপনার ছেলের বয়স এখন পাঁচ, বাইরে ওকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হবে। এ বিষয়টা কী ভাবে দেখেন?
উ: ওকে খুব সাধারণ ভাবে বড় করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাও সাধারণ ভাবে থাকি। আমিও সে ভাবেই বড় হয়েছি। এখনকার প্রজন্ম সব কিছুতেই বড্ড বেশি ‘কুল’। নৈতিকতা, সততা, আদর্শ... এই জায়গাগুলোয় একটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ছোট থেকে এগুলো শেখাতে হবে। ছোটরা একতাল মাটির মতো। আমরা যেমন আকার দেব, তেমনই হবে।
দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
ছবি: সৌম্য সিংহ