ট্রাম্প-নিষেধে
স্থগিতাদেশ,
স্বস্তি হার্ভার্ডে
মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় l বস্টন
২৩ মে: গত শিক্ষাবর্ষে আমেরিকার অর্থ-ব্যবস্থায় বিদেশি পড়ুয়াদের অবদান ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার, এমন পরিসংখ্যান দিচ্ছে শিক্ষা নিয়ে পৃথিবী জুড়ে গবেষণা ও সমীক্ষা চালানো সর্ববৃহৎ সংস্থা— ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটর’। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১১ লক্ষ বিদেশি ছাত্রছাত্রী আমেরিকার বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা এবং আমেরিকার সব থেকে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ডে এই মুহূর্তে বিদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা ৬ হাজারেরও বেশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট পড়ুয়ার ২৭.৩ শতাংশ। এ হেন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি পড়ুয়া, গবেষক ও অধ্যাপকদের আসার উপরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমেরিকার একটি আদালত সেই নিষেধাজ্ঞার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। ফলে আপাত স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটছে না হার্ভার্ড-সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গত কাল হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটির সচিব ক্রিস্টি নোয়েম এক্স হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষ ও চিনা কমিউনিস্ট পার্টির বাড়বাড়ন্তে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে। চড়া মাইনে নিয়ে বিদেশ থেকে পড়ুয়া আনা কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ অধিকারের মধ্যে পড়ে না, এই বিশেষ অধিকার তাদের দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসের পরিবেশ ঠিক করার কথা হার্ভার্ডকে বহু বার বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা সেই সুযোগ হারিয়েছে। তাই বিদেশি পড়ুয়া ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিদেশি গবেষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসার শংসাপত্র খারিজ করা হল।’ এখানেই না থেমে নোয়েম আরও জানান, হার্ভার্ডের উপরে এই নিষেধাজ্ঞা যেন আমেরিকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ‘সতর্কবার্তা’ হিসেবে গ্রহণ করে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান এম গার্বার সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি ও অপ্রয়োজনীয়’ আখ্যা দিয়ে বলেন,
“১৪০টি দেশ থেকে পড়ুয়ারা এসেছেন। বিদেশি পড়ুয়াদের ছাড়া হার্ভার্ড হার্ভাড-ই নয়। কলমের এক খোঁচায় প্রেসিডেন্ট সেটা পাল্টে দিতে পারেন না।” তাঁর কথায়, “আমরা আদালতে অভিযোগ জানিয়েছি। যার প্রথম পদক্ষেপ এই নিষেধাজ্ঞার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করা। আমরা একে একে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপও ঠিক করব। এবং আমাদের আন্তর্জাতিক দফতর গবেষক ও পড়ুয়াদের নিয়মিত খবর দেবে।” গার্বারের প্রত্যাশামতো কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ম্যাসাচুসেটসের প্রাদেশিক আদালতের বিচারপতি অ্যালিসন বারোজ় এই নিষেধাজ্ঞার উপরে স্থগিতাদেশ জারি করেন।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই হুমকিতে আমেরিকায় বসবাসকারী বিদেশি পড়ুয়া মহলে আশঙ্কা ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল হার্ভার্ডের ফলিত পদার্থবিদ্যার এক গবেষক, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় বন্ধুর সঙ্গে। তিনি এখন পিএইচডি গবেষণা শেষ করে ‘অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং’ ভিসায় এ দেশে রয়েছেন। জানালেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট এবং কর্তৃপক্ষের উপরে সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছেন তাঁরা। তিনি এবং তাঁর সহকর্মী গবেষকদের ধারণা, ট্রাম্প সরকার চাইলেও এই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে না, কোনও না কোনও বিচারপতি এর বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ জারি করবেনই। ঠিক যেমন হল এ দিন। এই ভারতীয় গবেষক আরও জানান যে, ট্রাম্প প্রশাসন যে এ রকম একটা পদক্ষেপ করতে পারে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ধারণা ছিল। কারণ সপ্তাহ দু’য়েক আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত ছাত্রছাত্রীর কাছে এই মর্মে একটি ইমেল আসে যে, এ ধরনের কোনও পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকবেন।