আসরে ইউনূসের সহকারীরা, তোপ সেনাপ্রধানকে
নিজস্ব প্রতিবেদন
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ঘনিষ্ঠ মহলে গত বৃহস্পতিবার ইস্তফার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। তা প্রকাশ্যে আসতেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। শুক্রবার সকাল থেকেই এ নিয়ে সরব হয়েছেন প্রশাসনের শীর্ষস্তরের আধিকারিকেরা, বিশেষত, যাঁরা ইউনূসের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে রয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, ইউনূস পদত্যাগ করবেন না। আর এক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা এ দিন বলেছেন, শুধু নির্বাচন করানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়নি। নির্দিষ্ট সময়েই নির্বাচন হবে। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, যে সব দলের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়ছে তাদের এবং সেনাবাহিনীকে কার্যত বার্তা দিলেন ইউনূস-ঘনিষ্ঠ এই দুই উপদেষ্টা। সূত্রের খবর, শীঘ্রই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন ইউনূস।
ফয়েজ প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী। এ দিন ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি স্পষ্ট লিখেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’। ওই পোস্টে তিনি জানিয়েছেন, সরকারকে আরও তৎপর এবং উপদেষ্টাদের আরও কার্যকর হতে হবে। রাখঢাক না করে এ-ও লিখেছেন, ‘সেনাবাহিনীও রাজনীতিতে নাক গলাতে পারবে না। আজকের দুনিয়ায় কোনও সভ্য দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের বক্তব্যে সেনাপ্রধান জুরিশডিকশনাল কারেক্টনেস রক্ষা করতে পারেননি। তবে সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে। সেনাবাহিনী-প্রশ্নে হুট করে কিছু করা যাবে না, হঠকারী কিছু করা যাবে না। তেমনি, ইনক্লুসিভনেসের নাম করে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনও চাওয়া যাবে না’। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে এবং সেই তারিখ ঘোষণার অধিকার একমাত্র প্রধান উপদেষ্টার।
ডিসেম্বর থেকে জুনে নির্বাচনের কথা এ দিন শোনা গিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানকেও। দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের শেষ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন— এই তিনটি আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব। তিনটিই কঠিন দায়িত্ব। শুধু নির্বাচন করার জন্য আমরা দায়িত্ব নিইনি।’’ জোরের সঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। এই সময়সীমার বাইরে একদিন যাওয়ারও কোনও সুযোগ নেই। নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন।’’ সেনাবাহিনীর নাম না করে তাদের খোঁচা দিয়ে ওই উপদেষ্টাও বলেন, ‘‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কাজেই তা নিয়ে কোনও কথা বলার প্রয়োজন ছিল না।’’
বিএনপি অবশ্য ইউনূসের পদত্যাগের বিষয় থেকে নিজেদের দূরেই রেখেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন এ দিন বলেন, ‘‘নির্বাচন কবে হবে, তা ঘোষণার পরিবর্তে তিনি যদি পদত্যাগ করতে চান, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা ওঁর ইস্তফা দাবি করিনি।’’