প্রয়াত কন্যার স্মৃতি বুকে নিয়ে জয়ের উৎসব এনরিকের
নিজস্ব প্রতিবেদন
১ জুন: মিউনিখে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে তখন প্যারিস সঁ জরমঁ-র সকলে উৎসবে মেতেছেন। ব্যতিক্রম নন তিনিও। হঠাৎ দেখা গেল, নিজের টি-শার্ট খুলে ফেললেন ম্যানেজার লুইস এনরিকে। গ্যালারি থেকে নেওয়া একটি কালো শার্ট পরে নেন। মুখে হাসি। না, চোখে এক ফোঁটাও জল ছিল না। বুকে এক ছোট মেয়ের সঙ্গে পিএসজির পতাকা পোঁতার ছবি।
আলিয়াঞ্জ এরিনা শুধু এগারো বনাম এগারো জনের লড়াই নয়, সাক্ষী থাকল বৃত্ত সম্পূর্ণ হওয়ার কাহিনিরও। যেখানে লেখা হয়েছে, চিরতরে হারিয়ে যাওয়া শিশু কন্যাকে দেওয়া এক বাবার প্রতিজ্ঞা রক্ষার বাস্তব গল্প। বাবার নাম লুইস এনরিকে। আর সেই ফুটফুটে কন্যার নাম জ়ানা। ২০১৫ সালে এই জার্মানির বার্লিনেই বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে পাঁচ বছরের জ়ানাকে নিয়ে উৎসবে মেতেছিলেন। চার বছরের মধ্যেই অন্ধকার নেমে এসেছিল এনরিকের জীবনে। হাড়ের ক্যানসারের সঙ্গে পাঁচ মাস লড়াই করে চিরবিদায় নিয়েছিল জ়ানা। যন্ত্রণা ভুলতে ফুটবলকেই বেছে নিয়েছিলেন এনরিকে। আর সেই ফুটবলই তাঁকে ফিরিয়ে দিল কন্যার সুখস্মৃতি।
শুক্রবার এনরিকে বলেছিলেন, “বার্সেলোনার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পরে বার্লিনে ট্রফি নিয়ে মেয়ের সঙ্গে উৎসবে মেতেছিলাম। শারীরিক ভাবে না থাকলেও সবসময় ওকে আমি অনুভব করি। ওর জন্যই আমার কাছে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ শনিবারের রাত পিএসজি সমর্থকদের কাছে উৎসবের। এনরিকের কাছে ছিল যন্ত্রণা ভোলার।
দশ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের পরে বার্লিনের মাঠে মেয়ের সঙ্গে বার্সেলোনার পতাকা পুঁতেছিলেন এনরিকে। শনিবার রাতে পিএসজি সমর্থকেরা এ রকমই একটি বিশাল টিফো বানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন স্টেডিয়ামে। এনরিকের সঙ্গে মিউনিখের মাঠে পিএসজির জয়ের পতাকা ওড়াচ্ছে জ়ানা। সে পরে রয়েছে ৮ নম্বর জার্সি। এনরিকে একা নন, পিএসজির সমর্থকেরাও মনে করেন, না থেকেও জ়ানা তাঁদের মধ্যেই আছে। আর সে দিন যেমন খুশি হয়ে সে বার্সার পতাকা মাঠে পুঁতেছিল, আজও তেমনি পিএসজির জয়ধ্বজা মিউনিখের মাঠে ওড়াবে জ়ানা।
ম্যাচ শেষের পরে সাংবাদিক বৈঠকে এনরিকে বলেন, “মেয়েকে মনে রাখার জন্য আমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের প্রয়োজন নেই। ও সব সময় আমাদের সঙ্গেই আছে, বিশেষ করে যখন হেরে যাই।’’ সেই বিশেষ টিফো নজর এড়ায়নি এনরিকেরও। সেই প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘খুব ভাল লাগছে। সমর্থকেরা আমার পরিবারের জন্য যে টিফো বানিয়েছে তা খুবই আবেগপূর্ণ। আমি সব সময় মেয়ের কথাই ভাবি।’’ এমনকি মৃত্যুর পরে এনরিকে বাড়িতে তাঁর মেয়ের কোনও ছবি রাখেননি। কারণ তিনি মনে করেন, জ়ানা সবসময় তাঁর সঙ্গেই রয়েছে।
তাঁর আমলে ক্লাব যে চূড়ান্ত লক্ষ্য পূরণ করেছে, সে কথাও স্পষ্ট জানিয়ে দেন এনরিকে। তাঁর কথায়, “পিএসজি-তে আসার প্রথম দিনে আমার ফরাসি ভাষা এ দিনের থেকেও খারাপ ছিল। কিন্তু আমি সকলকে জানিয়ে দিয়েছিলাম আমার চূড়ান্ত লক্ষ্যের কথা। পিএসজির ট্রফি ক্যাবিনেটে সব ট্রফি আমি দেখতে চাই। এত বছর ধরে শুধু মাত্র আমরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে পারিনি। সেই চূড়ান্ত লক্ষ্যও পূরণ হল।”
পিএসজি শুধু ইতিহাসের পাতায়ই স্থান পেল না, অমর হয়ে রইল জ়ানাও!
উদ্যাপন: জয়ের পরে এনরিকেকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ফুটবলারদের। রয়টার্স
স্মরণীয়: প্রয়াত কন্যা জ়ানার সঙ্গে এনরিকের সেই টিফো। এক্স