মুছে গেল ‘আবাস’, প্রশ্নের মুখে পুরসভা
বাসুদেব ঘোষ
শান্তিনিকেতন: অর্ধেক ভাঙার পরে বোলপুর পুরসভার নির্দেশে কাজ বন্ধ হয়েছিল। পুরসভার তরফে গেটে তালাও দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও, রবিবার শান্তিনিকেতনের অবনপল্লিতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ‘আবাস’ বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হল। ঘটনায় বিস্মিত অবনীন্দ্রনাথের আত্মীয়, আশ্রমিক ও এলাকার বাসিন্দারা। পুরসভার নির্দেশের পরেও কী করে বাড়িটি ভাঙা হল, প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত করে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন পুরকর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
শান্তিনিকেতনে কয়েক কাঠা জমির উপরে অবনীন্দ্রনাথের পুত্র অলোকেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। অবনীন্দ্রনাথ নাম রেখেছিলেন ‘আবাস’। এই বাড়িকে কেন্দ্র করেই এলাকার নামকরণ হয় অবনপল্লি। কয়েক বার এখানে এসেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। সেই বাড়ির অস্তিত্ব আর রইল না বলে এ দিন আক্ষেপ করেন এলাকাবাসী।
সূত্রের খবর, অবনীন্দ্রনাথের বংশধরেরা জায়গাটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। তার পরে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘আবাস’ ভাঙার কাজ শুরু হয়। তা নিয়ে বিতর্কও হয়। তার পরে বাড়িটি পরিদর্শন করেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক ও বোলপুর পুরকর্তৃপক্ষ। বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ করতে পুরসভার তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়। বাড়ির গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে পাঁচিল ভেঙে যন্ত্র দিয়ে বাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়।
পুরসভা বাড়িটির গেটে তালা দিয়ে রাখা সত্ত্বেও কী ভাবে বাড়িটি ভেঙে ফেলা হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। অবনীন্দ্রনাথের নাতনি ধীরা ঠাকুর মজুমদার বলেন, “দাদামশাইয়ের স্মৃতি এ ভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে, স্বপ্নেও ভাবিনি! এটি আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনার।” প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “খুবই অন্যায় হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পুরসভার খেয়াল রাখা উচিত ছিল।”
মহকুমাশাসক (বোলপুর) অয়ন নাথ বলেন, “শান্তিনিকেতন এলাকায় কোনও বাড়ি সংস্কার বা ভাঙার ক্ষেত্রে জেলাশাসকের নির্দেশ মতো পুরসভা বা ‘শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের’ অনুমতি প্রয়োজন। তা না মানা হলে বিষয়টি বেআইনি। এ ক্ষেত্রে পুরসভাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।” পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ বলেন, “আমি গত দেড় মাস ধরে অসুস্থ। অফিস যেতে পারিনি। তাই ওই বাড়িটি কারা ভেঙেছেন, এখন আমার জানা নেই। যথাযথ তদন্ত করে পদক্ষেপ করা হবে।”