বাবা-মাকে তেজপ্রতাপ লিখলেন, ‘আপনারা আমার সব’
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ১ জুন: গত রবিবার ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে ত্যাজ্যপুত্র করে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন পিতা লালুপ্রসাদ যাদব। আজ, বাবা-মায়ের ৫২তম বিবাহবার্ষিকীতে সমাজমাধ্যমে বাবা-মায়ের ভালবাসা ও বিশ্বাস চেয়ে আবেগঘন পোস্ট করলেন তেজপ্রতাপ। লিখলেন, ‘‘...আপনাদের বিশ্বাস ও ভালবাসা ছাড়া আমার আর কিছু প্রয়োজন নেই।’’ তাৎপর্যপূর্ণ হল আজকের ওই পোস্টে তিনি তাঁর সঙ্গে থাকা কিছু ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন, যাদের তিনি বিশ্বাসঘাতক জয়চাঁদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সম্ভবত, বোঝাতে চেয়েছেন তাঁদেরই কারণে তিনি আজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আজকের ওই বক্তব্যকে তেজপ্রতাপের দিক থেকে মিটমাটের বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিতর্কের সূত্রপাত গত শনিবার। সে দিন সন্ধ্যায় সমাজমাধ্যমে এক মহিলার সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন তেজপ্রতাপ। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘আমি ওই মহিলার সঙ্গে গত বারো বছর ধরে সম্পর্কে রয়েছি। দীর্ঘদিন ধরেই আমি বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চাইলেও, বুঝতে পারছিলাম না কী ভাবে তা জানাব...সেই কারণে আজ এই পোস্টের মাধ্যমে আমার মনের কথা তুলে ধরলাম।’’ তেজপ্রতাপ বারো বছর সম্পর্কের মধ্যে থাকার দাবি করলেও, সাত বছর আগে ২০১৮ সালে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দারোগা প্রসাদ রায়ের নাতনি ঐশ্বর্যার সঙ্গে বিয়ে হয় তেজপ্রতাপের। যদিও বিয়ের কিছু দিনের মধ্যেই বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন তেজপ্রতাপ।
চলতি বছরের শেষে বিহারে ভোট। তার আগে তেজপ্রতাপের এ ধরনের বার্তা দেওয়া আদৌ ভাল ভাবে নেয়নি যাদব পরিবার। বিশেষ করে পরিবারনির্ভর আরজেডি-তে এ ধরনের পারিবারিক ‘কেচ্ছা’ জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বুঝে তড়িঘড়ি বিধায়ক ছেলেকে দল থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন লালুপ্রসাদ। গত রবিবার দলের পক্ষ থেকে লালুপ্রসাদ জানান, বড় ছেলের গতিবিধি, সার্বজনীন আচরণ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহার পরিবারের সংস্কারের সঙ্গে খাপ খায় না। তাই তাঁকে দল ও পরিবার থেকে দূর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাবার ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে কার্যত কোথাও মুখ খোলেননি তেজপ্রতাপ। আট দিনের মাথায় আজ নীরবতা ভেঙে সমাজমাধ্যমে বাবা-মায়ের বিবাহবার্ষিকীর দিনটিকেই পাল্টা বার্তা দেওয়ার জন্য বেছে নেন তিনি। ‘আমার আদরের বাবা-মা’ সম্বোধন করে তেজপ্রতাপ লেখেন, ‘‘আমার গোটা পৃথিবী আপনাদের ঘিরেই। আপনারা ও আপনাদের আদেশ আমার কাছে ভগবানের নির্দেশের চেয়ে বেশি। আপনারা থাকলে তবেই আমার কাছে সব কিছু আছে। আমার কেবল আপনাদের বিশ্বাস ও ভালবাসা চাই। অন্য কিছু নয়। বাবা, আপনি না থাকলে না এই দল থাকত, না আমার সঙ্গে রাজনীতি করা কিছু জয়চাঁদের মতো লোভী লোক থাকত। আপনারা সুস্থ ও খুশিতে থাকুন এটুকুই
কামনা করি।’’
স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, তেজপ্রতাপ ‘জয়চাঁদ’ বলতে কাকে বোঝাতে চেয়েছেন! এ নিয়ে কিছু খোলসা করেননি তেজপ্রতাপ। কিন্তু রাজনীতিকদের বক্তব্য, তেজপ্রতাপ সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন তাঁকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার পিছনে এবং যাদব পরিবারকে দুর্বল করার জন্য কিছু লোভী ও বিশ্বাসঘাতক সক্রিয় রয়েছে। বিজেপির বক্তব্য, আসলে ক্ষমতার বৃত্ত থেকে তেজপ্রতাপকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে দ্রুত নিজের হারানো জায়গা ফিরে পাওয়ার কৌশল নিয়েছেন লালু-পুত্র।