রাজনাথ কেন বললেন না, প্রশ্ন কংগ্রেসের
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ১ জুন: অপারেশন সিঁদুর-এর পরে হওয়া সর্বদলীয় বৈঠকে কেন ভারতীয় বিমান ধ্বংস হওয়ার কথা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিরোধীদের জানাননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। গত কাল চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান সিঙ্গাপুরে একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে নেন, অপারেশন সিঁদুরের সময়ে ভারতের যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়েছিল। ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই জয়রামের প্রশ্ন, সর্বদলীয় বৈঠকে কেন ওই তথ্য দিলেন না প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ? কেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান বিদেশে বসে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বলার পরে তা জানতে পারল দেশবাসী? প্রধানমন্ত্রীই বা দেশের কথা না ভেবে নির্বাচনী প্রচারে নিজেকে ডুবিয়ে দিচ্ছেন কেন, প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও।
অপারেশন সিঁদুর চলার সময়ে পাকিস্তান দাবি করেছিল, তারা ভারতের ছ’টি যুদ্ধবিমানকে ভূপতিত করে। সে সময়ে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে এই প্রশ্নের কোনও সরাসরি উত্তর দেওয়া হয়নি। বায়ুসেনার তরফে এক বা একাধিক বিমান ভেঙে পড়ার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল। যু্দ্ধে ক্ষয়ক্ষতি থাকেই বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। আর সরাসরি ভাবে বলা হয়েছিল, ভারতীয় সব পাইলট নিরাপদে নিজেদের বায়ুসেনাঘাঁটিতে ফিরে এসেছেন। সত্যিই যে ভারতীয় বিমান ভেঙে পড়েছিল, সেই তথ্য গত কাল সিঙ্গাপুরে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই প্রথম বার মেনে নেন অনিল চৌহান। তার পর থেকেই ঝড় উঠেছে দেশীয় রাজনীতিতে।
আজ কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ দু’দু’বার সর্বদলীয় বৈঠক করা সত্ত্বেও বিমান ভেঙে পড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিরোধীদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। তাঁর প্রশ্ন, সরকার অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিরোধীদের তথ্য দেওয়া এবং সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার পরিবর্তে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের মুখ থেকে বিমান ভেঙে পড়ার তথ্যের জন্য কেন অপেক্ষা করছিল?’’
গত কাল অনিল চৌহানের বক্তব্য সামনে আসার পরে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে সরকার। নতুন করে সরকারকে আক্রমণের সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন বিরোধীরা। নতুন করে দাবি উঠেছে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার। জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ সিঙ্গাপুরে যা বলেছেন, সেই তথ্য রাজনাথ সিংহ যদি সর্বদলীয় বৈঠকে জানাতেন, তা হলে তা উচিত হত। প্রয়োজনে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে এ নিয়ে তথ্য জানাতে পারত সরকার। তা হলে দেশবাসীকে অনিল চৌহানের সিঙ্গাপুরে গিয়ে মুখ খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না। ’’ অন্য দিকে আজ বেঙ্গালুরুতে খড়্গে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত আপাতত কিছু দিন প্রচারপর্ব থেকে দূরে থাকা। দেশের কথা ভাবা, শত্রুর কথা ভাবা। তা না করে উনি বুক বাজিয়ে চলেছেন। এমন কেউ করে না। ওঁর সঙ্গে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্য কথাটা বলছি না।’’
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী কার্গিল পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেন। জয়রাম বলেন, চার সদস্যের ওই দলটি ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে পর্যালোচনা কমিটির রিপোর্ট জমা দেয় এবং পরের বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি দেড়শো পাতার ওই রিপোর্ট (ফ্রম সারপ্রাইজ় টু রেকনিং) সংসদে পেশ করে বাজপেয়ী সরকার। জয়রামের প্রশ্ন, ‘‘এটি কেবল একটি উদাহরণ। চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন কোনও পদক্ষেপ কি করবে সরকার?’’
পাশাপাশি চিন-পাকিস্তান অক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকারও দাবি করেছেন রমেশ। প্রসঙ্গত পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ এ দিনও চিনের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা জোর গলায় বলেছেন। এ দিন বালুচিস্তানের কোয়েট্টায় তিনি দাবি করেছেন, চিন হল পাকিস্তানের সবচেয়ে পরীক্ষিত বন্ধু। সৌদি আরব সবচেয়ে ভরসার। তেমনই তুরস্ক, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। শরিফের কথায়, ‘‘চিনের মতো বন্ধুরা আর আশা করে না যে আমরা ভিক্ষাপাত্র হাতে দাঁড়াব।’’ এই আবহেই কংগ্রস মুখপাত্র রমেশ বলেছেন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরের সময়ে চিন-পাকিস্তান অক্ষ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এ ধরনের বিষয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠকে আলোচনা হওয়া উচিত। জেনারেল চৌহান যে বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তা কেবল সামরিক নীতির ক্ষেত্রে নয়, বরং ভারতের বিদেশনীতি, আর্থিক নীতি ও কূটনীতির উপরেও প্রভাব ফেলেছে।’’