হয়েছে। এর সম্পূর্ণ দায় শেখ হাসিনার। চিফ প্রসিকিউটর জানান, তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নির্বিচারে হত্যার নির্দেশ দেওয়া, প্ররোচনা এবং উস্কানি-সহ পাঁচটি অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। আদালতে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ‘গণঅভ্যুত্থানের শেষ মুহূর্তে (গত ৩, ৪ ও ৫ অগস্ট) শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বাহিনীকে হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসি-সহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারী সাধারণ মানুষ, যাঁরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছিলেন তাঁদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ এ ক্ষেত্রে সরাসরি হত্যার নির্দেশ, গুলি করে পঙ্গু করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ক হাসিনার ফোনের বহু কল রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কল রেকর্ড, ভিডিও ফুটেজ, উদ্ধার করা বুলেট, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউল-সহ বিভিন্ন প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি সরকার পক্ষের।
চিফ প্রসিকিউটরের কথায়, ‘‘এই বিচার কোনও অতীতের প্রতিশোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা, যে ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধ থাকবে না।’’ এ দিনের বিচারপ্রক্রিয়া সরসরি দেশের সরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মামলার শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করা হল।
আওয়ামী লীগের প্রধানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে ১৩৫ পাতার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রমাণ, ভিডিয়ো ও অডিয়ো কলের বিস্তারিত উল্লেখ করে মোটি ৮৭৪৭ পাতার অভিযোগ পত্র ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। সরকারের তরফে ট্রাইব্যুনালে জানানো হয়েছে, এ মামলায় সাক্ষী হিসেবে হতাহতদের যে সব চিকিৎসক চিকিৎসা করেছিলেন, যাঁরা সরাসরি আহত হয়েছেন এবং ‘শহিদ’ পরিবারের স্বজন যাঁরা মৃতের অন্ত্যেষ্টি করেছেন, তাঁরাও সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে আসবেন। প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন কল রেকর্ড, অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ, জাতীয় দৈনিকে কাটিং প্রস্তুত এবং উদ্ধার করা বুলেট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
আজ হাসিনার বিরুদ্ধে যে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তাকে ‘সাজানো’ বিচার বলে কটাক্ষ করেছন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, ‘‘এটা বিচার নয়, প্রহসন। ক্যাঙারু কোর্ট বসানো হয়েছে। মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ করা হচ্ছে আমাদের নেত্রীর নামে। বাংলাদেশের মানুষ এই বিচার মেনে নেবেন না।’’ একটি লিখিত বিবৃতিও এ দিন দিয়েছেন তিনি। তাতে তিনি বলেছেন, ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রহসনমূলক বিচারের নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। ইউনূস গংরা স্বাধীনতাবিরোধী ও দেশবিরোধী অপশক্তি একজোট বেঁধে পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের অপতৎপরতা চালাচ্ছে’।
হাসিনা সরকারের পতনের পিছনে বড় ষড়যন্ত্র ছিল বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করে আসছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি জামাত-উদ দাওয়ার প্রধান হাফিজ় সইদের দুই ঘনিষ্ঠ সাইফুল্লা কাসুরি এবং মুজাম্মিল হাশমি দাবি করেছেন, গত বছর বাংলাদেশে যে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছিল, তাতে তাঁদের সংগঠনের সদস্যেরা যুক্ত ছিলেন। তাঁরা ১৯৭১-এর ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছেন। হাশমি বলেছেন, ‘‘গত বছর আমরা বাংলাদেশে ভারতকে
পরাজিত করেছি।’