৮ জুন: ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই আরিনা সাবালেঙ্কাকে পাল্টা তোপ দাগলেন কোকো গফ। ২০১৫ সালে সেরিনা উইলিয়ামদের পরে প্রথম মার্কিন মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে যিনি রলঁ গারোস
জিতেছেন শনিবার।
ফাইনালে তিন সেটের লড়াইয়ে দুরন্ত ভাবে তিনি হারান বেলারুসের তারকাকে। যিনি এখন বিশ্বের এক নম্বর। ম্যাচের পরে সাবালেঙ্কা সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘খুবই যন্ত্রণাদায়ক এই হারটা। গোটা সপ্তাহে আমি দারুণ টেনিস খেলছিলাম। অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়েছি। ইগা (শিয়নটেক) তাদের মধ্যে অন্যতম। আমার মনে হয় ইগা যদি সেমিফাইনালে আমাকে হারাতে পারত, তা হলে শনিবার ফাইনালে ওই জিতত।’’ ইগা চার বারের ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়ন। গত তিন বার প্যারিসে তাঁর হাতেই উঠেছে ট্রফি।
বেলারুসের তারকার এই মন্তব্য ভাল ভাবে নেওয়ার কথা নয় কোকোর। তিনি নেনওনি। তবে কোনও বিতর্কে না জড়িয়ে ২১ বছরের তারকা সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ‘‘এই কথাটা আমি মানতে পারছি না। সত্যিটা হল, আমি এখন ট্রফিটা নিয়ে বসে আছি। ইগার কৃতিত্বের উপরে কোনও ছায়া ফেলছি না। তবে আমি কিন্তু ইগার বিরুদ্ধে মাদ্রিদে স্ট্রেট সেটে জয় পেয়েছি (গত মাসে)। তাই এই কথাটা বলা আমার মনে হয় একেবারেই ঠিক নয়।’’
সাবালেঙ্কার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর প্রেরণার প্রয়োজন ছিল। তাই কোকো খুঁজে নেন গ্যাবি টোমাসকে। যিনি গত বছর প্যারিস অলিম্পিক্সে মেয়েদের ২০০ মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছিলেন। তাঁর পদ্ধতি অনুসরণ করেই আসে সাফল্য
কী ছিল সেই প্রেরণা? অলিম্পিক্সে নামার আগে একটি অ্যাপে টোমাস লিখে রেখেছিলেন যে তিনি অলিম্পিক্সে চ্যাম্পিয়ন হবেন। প্রতি দিন সেই লেখাটা পড়তেন আর মনে মনে আওড়াতেন। কোকোও সেই একই পথ অনুসরণ করেন। যা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি একটি কাগজে অনেক বার লিখেছিলাম, যে ২০২৫ সালের ফরাসি ওপেনে আমি চ্যাম্পিয়ন হব। টোমাস কিন্তু শুধু লিখেই রাখেননি, কাজেও করে দেখিয়েছেন। আমি তাঁর সেই মানসিকতাই অনুসরণ করেছি।” কোকো ফরাসি ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে সমাজমাধ্যমে তাঁর লেখা সেই প্রতিজ্ঞার কথা ছড়িয়ে পড়ে।
শুধু কাগজে সেই বাক্যটি লেখাই নয়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও বারবার সেই কথাকে তিনি মনে মনে আওড়েছেন। সেই প্রসঙ্গ নিয়ে কোকো বলেন, “আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অন্য দিকের মানুষটিকে প্রতিটি দিন বিশ্বাস জোগাতাম। সেই ফল পেয়েছি। যখন কেউ কোনও কিছু পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো ছাড়া তাঁর মাথায়
কিছু থাকে না।”
এই নিয়ে প্রথম বার ফরাসি ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হলেন কোকো। শেষ সেটের সময় বারবার টেলিভিশন ক্যামেরা তাক করছিল তাঁর মায়ের দিকে। কখনও তিনি চোখ বন্ধ করে মনে মনে প্রার্থনা করছেন, কখনও বা কোকোকে কিছু নির্দেশ দিচ্ছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে কোকো ছুটলেন তাঁর মায়ের দিকে। জড়িয়ে ধরলেন মাকে। প্রথম বার ফরাসি ওপেন জয়ের পরে বলেও দিলেন, “প্যারিসের দর্শকদের ধন্যবাদ। আমার মায়ের দিকেও বারবার তাকাচ্ছিলাম। বুঝতে পারছিলাম, মাও আমার মতো সমান দুশ্চিন্তায় রয়েছে। ভাগ্য ভাল, সেই দুশ্চিন্তার রেশ শেষ
পর্যন্ত থাকেনি।”
ম্যাচে প্রথম সেটে কোকোর হারের পরে প্যারিস সাক্ষী থাকল প্রত্যাবর্তনের। পরের সেটে কার্যত সাবালেঙ্কাকে দাঁড়াতেই দেননি কোকো। অবশ্য কোকোর চাপে বারবার ‘আনফোর্সড এরর’ করেছেন সাবালেঙ্কা। পরিসংখ্যান বলছে, বেলারুশের তারকা মোট ৭০ বার আনফোর্সড এরর করেছেন। যা এককথায় অবিশ্বাস্য। দ্বিতীয় সেট মাত্র ৩৫ মিনিটের ব্যবধানে ৬-২ ফলে জিতে যান কোকো।
তাঁর থেকে যে কোকো কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিলেন সে কথা স্বীকার করেছেন সাবালেঙ্কাও। তবে যে ভাবে তিনি প্রথম থেকে দাপটের সঙ্গে এ বারের ফরাসি ওপেনে খেলে এসেছেন, তার পরে ফাইনালে এই হার যে মানতে পারছেন না। তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট।
এ দিকে, ফরাসি ওপেনের মেয়েদের ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হলেন ইটালির সারা ইরানি এবং জ্যাসমিন পাওলিনির জুটি। তাঁরা ফাইনালে হারান কাজাখস্তানের আনা দানিলিনা ও সার্বিয়ার আলেকসান্দ্রা ক্রুনিচকে। ফল ৬-৪, ২-৬, ৬-১।