মেলেনি টাকা, বৈঠকই সার, রাজ্যের কাজে রুষ্ট আদালত
নিজস্ব সংবাদদাতা
হাই কোর্ট-সহ রাজ্যের সব আদালতের অর্থাভাব এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে নবান্নকে টাকা মঞ্জুর করতে বলেছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু কার্যত নড়ে বসেনি রাজ্য। শুধু কলকাতা হাই কোর্টের ইন্টারনেটের বিল বাবদ সাড়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি বকেয়া রেখেছে তারা। সোমবার মামলায় এ কথা জানতে পেরেই তীব্র উষ্মা প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চ। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে থাকা রাজ্যের অ্যাকাউন্ট মামলায় যুক্ত করারও হুঁশিয়ারি দেয় আদালত। শেষমেশ কোর্টের নির্দেশ, হাই কোর্ট প্রশাসনের সঙ্গে মুখ্যসচিব এবং অর্থসচিবকে ২৯ অক্টোবর এবং ৬ নভেম্বর বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আগামী ১০ নভেম্বর পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যকে প্রতিটি বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
এ দিন শুনানিতে হাই কোর্ট প্রশাসনের আইনজীবী সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, তিন বছর ধরে হাই কোর্টের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার (বিএসএনএল) বকেয়া আছে ৫ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। যা শুনে বিচারপতি দেবাংশু বসাক বলেন, “তিন বছর ধরে টাকা বকেয়া। আজ যদি ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, হাই কোর্টের সার্ভার কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। এক মাসে দু'বার বৈঠক করে এই পদক্ষেপ করেছে রাজ্য?” তিনি আরও বলেন, “রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে থাকা রাজ্যের একত্রিত তহবিলের অ্যাকাউন্ট এই মামলায় যুক্ত করব। আদালতের অনুমতি ছাড়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে পারবে না রাজ্য। মুখ্যসচিবকে বলুন আজকের মধ্যে পুরো বকেয়া মিটিয়ে দিতে।”
রাজ্যের কৌঁসুলি জানান, বিএসএনএলের মোট বকেয়ার মধ্যে ২ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকার অনুমোদন দিয়েছে অর্থ দফতর। দ্রুত সেই অর্থ দেওয়া হবে কোর্ট কর্তৃপক্ষকে। আরও দু'দিন সময় দিলে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে বাকি টাকাও মিটিয়ে দেওয়া হবে। তা শুনে বিচারপতি বসাকের মন্তব্য, “আমরা বাকরুদ্ধ। আশ্চর্যের যে এখনও ইন্টারনেট পরিষেবা চালু রয়েছে। কবে টাকা মেটাবেন? কবে আদালতের জন্যে প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করবেন? মনে হচ্ছে শামুক ও কচ্ছপের মধ্যে গতির প্রতিযোগিতা চলছে।”
এ দিন হাই কোর্টের আইনজীবী রাজ্যের অর্থসচিব, বিচারসচিব এবং কলকাতা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মধ্যে বৈঠকের রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি জানান, হাই কোর্টের ১১টি প্রকল্পের এবং জেলা আদালতের ২৫টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে অর্থ দফতর। তবে বরাদ্দ ৮৬ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকের রিপোর্ট দেখে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “রিপোর্টের প্রথম দু'টি লাইনে রাজ্য জানিয়েছে, সময়ের মধ্যে সব দাবি পূরণ করা হয়েছে এবং প্রশাসনিক খরচ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে ইন্টারনেটের বিল তিন বছর ধরে বাকি!”