‘সুগন্ধী ফুলের গন্ধে’ আজ থেকে বঙ্গে বর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদন
জন্ম নেওয়ার পর থেকেই ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, আজ, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে সে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। সন্ধ্যায় বা রাতে সে অন্ধ্রপ্রদেশের কাকিনাড়ার কাছাকাছি কোনও জায়গায় আছড়ে পড়বে। ওই এলাকায় ঝড়ের পাশাপাশি প্রবল বর্ষণের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে ওড়িশা, তেলঙ্গানায়। ঝড় আছড়ে না-পড়লেও আজ, মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা-সহ কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা আছে। শুক্রবার দার্জিলিং, কালিম্পং এবং ডুয়ার্সের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। চলতি সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় সব জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে তারা।
মৌসম ভবন জানিয়েছে, সুগভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে সোমবার সকালেই দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়েছে। নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী, এই ঝড়ের নাম মোন্থা। নামটি তাইল্যান্ডের দেওয়া। এর অর্থ সুগন্ধী ফুল। আবহবিদেরা জানান, এই সুগন্ধী ফুল বঙ্গে এসে না পড়লেও তার প্রভাব পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত থাকবে। “বলা যেতে পারে, অন্ধ্রপ্রদেশে ঝরে পড়লেও ফুলের গন্ধ বাংলায় পৌঁছবে”, মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর। সূত্রের খবর, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, তেলঙ্গানায় ইতিমধ্যেই দুর্যোগের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি হয়েছে ওই রাজ্যগুলির প্রশাসনও। অন্ধ্রপ্রদেশে আছড়ে পড়ার পর মোন্থার অবশিষ্টাংশ শক্তি খোয়াতে খোয়াতে মধ্য ভারতের দিকে যাবে।
আজ, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে আকাশ ঝলমলে ছিল। তবে হাওয়ার বেগ ছিল বেশি। সকালে জোয়ারের সময়ে সমুদ্র তুলনায় কিছুটা উত্তাল ছিল। এ দিন নুলিয়ারা মাইকে হেঁকে পর্যটকদের বার বার সতর্ক করেন। সমুদ্রে নামলে সরিয়ে দেওয়া হয়। মৎস্য দফতর শঙ্করপুর, শৌলা, পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে প্রচার করে। আজ, মঙ্গলবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে মাছ ধরতে না যেতে বলা হয়েছে। প্রচার চলছে কৃষি দফতরের তরফেও। মাঠে এখন ধান পাকছে। ধানগাছে শিষ আসছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কৃষি-অধিকর্তা সুকান্ত সাহা রায় বলেন, “ব্লকে-ব্লকে মাইক নিয়ে প্রচারে জানানো হচ্ছে, ধান পেকে গেলে চাষিরা যেন ঘরে তুলে নেন।”
দুর্যোগের পূর্বাভাসের জেরে সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় নদী বাঁধগুলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। কিছু এলাকায় নদী বাঁধের অবস্থা খারাপ বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেচ দফতর সূত্রের খবর, আজ, মঙ্গলবারের মধ্যে বাঁধগুলি মেরামত করা হবে। দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন উপকূল এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ দিন দিনভর মাইকে প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের ট্রলারগুলি ফিরতে শুরু করেছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘ফ্লাড শেল্টার’ তৈরি রয়েছে।